খুলনার মুজগুন্নি বাস্তুহারা কলোনিতে প্লট মালিকদের জায়গা বুঝিয়ে দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সকাল ১০টার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় স্থানীয়রা উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত বুলডোজার ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে পুলিশ ও স্থানীয়দের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান চালানোয় তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হন। অন্যদিকে, পুলিশ জানায়, ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে।
সরকারি ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল বলেন, ‘আমাদের আগে থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। হঠাৎ পুলিশ এসে আমাদের সঙ্গে কথা না বলে হামলা চালিয়েছে। আমি নিজেও আহত হয়েছি। আমাদের এলাকার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন আহত হয়েছে।’
অন্য এক বাসিন্দা বিলকিস বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি। হঠাৎ আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে প্রশাসন। নারী-পুরুষ সবাই আহত হয়েছে। আমরা মরলেও এ জায়গা ছাড়ব না’
আহত মুক্তিযোদ্ধা রাসেল হাওলাদার প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমরা ভূমিহীন মানুষ, কোথায় যাব? বাংলাদেশে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে, আর আমরা এ দেশের নাগরিক হয়েও কি থাকার অধিকার হারাব?’
জানা গেছে, খুলনার মুজগুন্নির দুই একর জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। তবে ১৯৮৭ সালে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ওই জমি লটারির মাধ্যমে ৪২ জন প্লট মালিকের কাছে বিক্রি করলেও ৩৫ বছর পরও তারা জায়গা বুঝে পাননি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য আমরা ছিলাম। অভিযানের সময় আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বিশেষ করে বুলডোজার চালক গুরুতর আহত হয়েছেন।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন