ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

কিশোরগঞ্জ পৌর মার্কেট: অবহেলার নিদর্শন ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প

আশরাফুল ইসলাম রাজন, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম
অবহেলার নিদর্শন কিশোরগঞ্জ পৌর মার্কেট। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

২০১৯ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ পৌর মার্কেট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কিশোরগঞ্জ পৌরসভা। ২০২২ সালে কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বণ্টন ও ভবন হস্তান্তরপ্রক্রিয়া শেষ হয়নি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, আর অব্যবহৃত অবস্থায় ভবনটি পরিণত হয়েছে অবহেলার নিদর্শনে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দোকান বুঝিয়ে না দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে ভবনের আসবাবপত্র, দরজা-জানালা ও টাইলস নষ্ট হচ্ছে। জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে, রং খসে পড়েছে, দেওয়ালে ফাটলও দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দোকান ভাড়া না পেয়ে রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা, অথচ একই সঙ্গে এডিবিকে দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি লভ্যাংশ।

স্বাধীনতার পর থেকে জেলার অন্যতম পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত এ মার্কেটে রয়েছে কসমেটিকস, খেলনা, সুতা, জুতা ও কাপড়ের ১৫৬টি দোকান। সপ্তাহে দুই দিন—রবিবার ও বৃহস্পতিবার, এখানে বসে ছাগলের হাট, ফলে ওই দিনগুলোতে বাজারের ভোগান্তি বেড়ে যায় বহুগুণ।

ব্যবসায়ী নাজমুল আলম রৌশন বলেন, ‘মার্কেট করার সময় আমাদের অস্থায়ী দোকানে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো স্থায়ী দোকান বুঝে না পাওয়ায় কষ্ট করে ছাপড়া ঘরে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।’

অপর ব্যবসায়ী হাদিউল ইসলাম হাবিব বলেন, ‘এই দেশে প্রথম টাইলসের ওপর ছাগলের হাট বসেছে কিশোরগঞ্জে। হাটের কারণে বিল্ডিংয়ের টাইলস নষ্ট হচ্ছে, জানালা-দরজা ভেঙে যাচ্ছে।’

ব্যবসায়ী শাকিল মিয়া জানান, ‘আগের দোকান ভেঙে যাওয়ায় ছোট ঘরে ব্যবসা করছি। জায়গা কম থাকায় মালামাল বাইরে রাখতে হয়, বৃষ্টি হলে সব নষ্ট হয়ে যায়।’

পৌর মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফুল বারী খোকন বলেন, ‘ভবন তৈরি হওয়ার পর থেকে সাবেক মেয়র গড়িমসি করেছেন। এখন প্রশাসক বদল হচ্ছে একের পর এক, কিন্তু সমাধান নেই। ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’

পৌরসভার প্রশাসক জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা না থাকায় দোকান হস্তান্তর বিলম্ব হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দ্রুত তদন্তপূর্বক দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তথ্য অনুযায়ী, পৌরসভার মালিকানাধীন প্রায় ২ একর ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে এই বাজারে ছোট-বড় দোকান থেকে মাসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতো। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও দেরিতে হস্তান্তরের কারণে সেই রাজস্ব এখন হারাচ্ছে পৌরসভা।