ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

তাড়াইলে তরুণদের মধ্যে অনলাইন জুয়ার আসক্তি, নজরদারিতে পুলিশ

তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে তরুণদের মধ্যে অনলাইন জুয়ার প্রতি ঝোঁক উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল ফোনে সহজ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ এবং বিভিন্ন বেটিং অ্যাপের প্রলোভনে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বেকার যুবকদের জুয়ার ফাঁদে পড়ার অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। রাত হলেই উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় গোপনে অনলাইন জুয়ার সেশন চলেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

অনেক তরুণ ‘বেট৩৬৫’, অনলাইন লাইভ ক্যাসিনো, কার্ড গেম, স্লট গেম ও বিভিন্ন বেটিং অ্যাপে টাকা লাগিয়ে জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। প্রথমে ছোট অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করলেও পরে লোভে পড়ে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হারাচ্ছে অনেকেই। পরিবারের সদস্যদের অজান্তে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লেনদেন করাও এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন জুয়ার কারণে এলাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়েছে।

অনলাইন জুয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ভেঙে পড়ছে, বাড়ছে পরিবারে অশান্তি, রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার, টাকা লেনদেনের চাপের কারণে মানসিক অশান্তি এবং আচরণগত পরিবর্তন—এসব কারণে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।

উপজেলার এক অভিভাবক জানান, ‘বাচ্চারা দিনরাত মোবাইলেই ডুবে থাকে। কিছু বললে রেগে যায়। পরে দেখি অনলাইন জুয়ায় টাকা হারিয়ে ফেলেছে। এর ফলে পরিবারে দুশ্চিন্তা লেগেই আছে।’

সমাজকর্মী ও সাংবাদিক রবীন্দ্র সরকার বলেন, ‘এই আসক্তি শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়—মানসিক চাপ, হতাশা এবং ছোটখাটো অপরাধে জড়ানোর প্রবণতাও বাড়াচ্ছে। তরুণদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় এখনই কঠোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান তাদের।’

অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে তাড়াইল থানা ওসি সাব্বির রহমান। তিনি বলেন, ‘অনলাইন জুয়ার বিষয়ে আমরা মনিটরিং আরও জোরদার করছি। যারা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তরুণদের এ বিপথগামিতা রোধে পরিবার, শিক্ষক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে। অনলাইনে জুয়া খেলা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তাড়াইলে এ ধরনের অপরাধ দমনে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’

বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকদের মতে, বিদ্যালয়ে সচেতনতা কর্মসূচি, মোবাইল ব্যবহারে অভিভাবকদের নজরদারি এবং তরুণদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা গেলে এই সমস্যাকে অনেকটা কমানো সম্ভব।