সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম

সুখের আশায় এপার-ওপার, তবুও হাহাকার

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম

বিএসএফ কর্তৃক পুশইনের শিকার  কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা গ্রামের আব্দুল জলিল ও তার পরিবার।  ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিএসএফ কর্তৃক পুশইনের শিকার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা গ্রামের আব্দুল জলিল ও তার পরিবার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

টানাটানির সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আনতে এবং পরিবার নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন নিয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শত শত পরিবার অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে ইটভাটা, কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে তারা সুখের স্বপ্ন বুনেছিলেন।

কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। শূন্য হাতে, এক কাপড় ছাড়া কিছুই নিয়ে তাদের এপার ফিরে আসতে হয়েছে। একটু সুখের আশায় এপার-ওপার ঘুরে তারা এখন হাহাকার কাটাতে পারছেন না। সম্প্রতি ভারত থেকে পুশইন হয়ে দেশে ফেরত আসা বেশিরভাগ পরিবার এমনই অবস্থা জানান।

উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামের দিনমজুর রুবেল মিয়া (২৭) বলেন, অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় স্ত্রী রোকসানা বেগম (২১) ও শিশু কন্যা রুবাইয়া’কে নিয়ে দালালের সহযোগিতায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দিল্লিতে যান। সেখানে সাত বছর ধরে বিভিন্ন ইটভাটায় স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করেন। সেখানে আরেক সন্তান খাদিজার (১) জন্ম হয়। অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রায় দুই লাখ টাকা জমা করেও, সাম্প্রতিক পুলিশি অভিযান ও ধরপাকড়ের কারণে তাদের ধরা পড়ে। সবকিছু কেড়ে নিয়ে রাতের আঁধারে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে। শূন্য হাতে শুধুমাত্র পড়নের কাপড় নিয়ে ঘোগারকুটি গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন রুবেল মিয়া ও তার পরিবার। দীর্ঘদিনের অনির্মিত বসতঘর দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। বর্তমানে বাবা বাড়িতে গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

একই এলাকার সেকেন্দার আলী (৩৫) জানান, ২০১১ সালে পরিবার নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। রাজস্থান ও হরিয়ানার ইটভাটায় কাজ করেন। চৌদ্দ বছর শ্রমের বিনিময়ে মহাজনের কাছে টাকা জমা রাখলেও সব ছেড়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরত আসতে হয় তাকে। বর্তমানে ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে দিনযাপন করছেন তিনি।

উত্তর বড়ভিটা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুল জলিলও সম্প্রতি ভারত থেকে পুশইন হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। ২০১৫ সালে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে দালালের সহযোগিতায় ভারতে গিয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৩৩), ছেলে সফিয়ার (২২) ও মেয়ে জেসমিন (৯) কে নিয়ে বিহার, হরিয়ানা ও রাজস্থানের বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করতেন। প্রায় দশ বছর পর পুলিশি অভিযান শুরু হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বেচ্ছায় ধরা দেন। সব টাকা-পয়সা ও সম্পদ কেড়ে নিয়ে গভীর রাতে বিএসএফ তাদের সিলেটের মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। শূন্য হাতে দেশে ফিরে বর্তমানে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

রুবেল মিয়া, সেকেন্দার আলী, ‘আব্দুল জলিলসহ অনেক শ্রমিক পরিবার দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থানকালে কষ্টার্জিত টাকা স্থানীয় মহাজনদের কাছে জমা রেখেছিলেন। কিন্তু পুশইনের সময় তারা কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। স্ত্রী-পরিজনসহ প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকার কোনো উপায় দেখছেন না তারা।’

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ফেরত আসা এসব পরিবারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মহীন যুব ও যুবতীদের জন্য সরকারিভাবে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

Link copied!