মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী  (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১০:০৭ এএম

স্বপ্নবাজ সালমানের স্বপ্নপূরণে বাধা পরিবারের অভাব

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী  (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১০:০৭ এএম

সালমান ফারসি ও তার পরিবার। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সালমান ফারসি ও তার পরিবার। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্বপ্ন যখন বড় হয়, তখন হাজারো প্রতিবন্ধকতা তাকে রুখতে পারে না। যেমনটা পারেনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর দরিদ্র এক পরিবারের ছেলে সালমান ফারসিকে। বাবার অসুস্থতা, সংসারের অভাব-অনটন, বড়ভাইয়ের বেকারত্ব সবকিছু ছাপিয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সালমান জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের সেবা করা। তবে স্বপ্নবাজ সালমানের স্বপ্নপূরণে বাধা পরিবারের অভাব।

সালমানের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামে। সে শাহ্ বাজার এএইচ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার শিক্ষার্থী। পরিবারে বাবা আবেদ আলী পেশায় দিনমজুর, তবে গত কয়েক বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় তিনি কর্মক্ষম নন। সালমানের এক বড়ভাই থাকলেও তিনিও বেকার। অভাবই পরিবারটির নিত্যসঙ্গী। সংসারের এমন পরিস্থিতিতে সালমানের ভালো ফলাফল যেন পরিবারে নতুন করে আশার আলো জ্বেলেছে।

সালমান বলে, 'আমি বাবা-মা আর শিক্ষকদের উৎসাহে ও সহযোগিতায় পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছি। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার স্বপ্ন আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই। আমি চাই লেখাপড়া শেষ করে মানুষের সেবা করতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।'

সালমান আরো বলেন, 'আমার এ পর্যন্ত আসার পথটা সহজ ছিল না। অভাবের সংসারে বাবা-মা ও বড়ভাইয়ের পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। আমি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র, তখন টাকার অভাবে আমার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ায় উপক্রম হয়েছিল। আমি ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লায় কাজের সন্ধানে যেতাম। সেখানে গিয়ে কখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ করতাম। কখনো দিনমজুরি করে টাকা রোজগার করতাম।

রোজগারের কিছু টাকা বাড়িতে পাঠানোর পাশাপাশি নিজের লেখাপড়ার জন্য সঞ্চয় করতাম জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে প্রায় এক বছর কেটে যায়। বাড়ি ফিরে আবার মাদরাসায় যাওয়া শুরু করি। স্যারেরা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। বাইরে গিয়ে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অভাবের কথা চিন্তা করে সাহস করিনি।

পরে একই মাদরাসায় আলিমে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পরে আবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাই। স্যারদের সহযোগিতা আর আমার পরিশ্রমে ও খোদাতায়ালার অশেষ কৃপায় এবারেও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছি। ধারদেনা করে বর্তমানে রংপুরে উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি। তবে অর্থাভাবে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব কিনা সে শঙ্কায় আছি। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সরকারি বেসরকারি সহায়তা কামনা করছি।'

মা দুলালী বেগমের চোখেও ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ। তিনি বলেন, 'একদিকে সংসারের অভাব আর ছেলের পড়ালেখা, দুই দিক সামাল দিতে পারছি না। সহায়তা না পেলে ছেলেটার পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে হবে, এটা ভাবলেই বুকটা ফেটে যায়।'

সালমানের প্রতিবেশীরাও মুগ্ধ তার সাফল্যে। এক প্রতিবেশী বলেন, 'এই এলাকায় আটজন ছেলে-মেয়ে এবারে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এরমধ্যে সালমানের পরিবারের অবস্থা একেবারে নাজুক। অভাবের সংসারে থেকেও সালমান এত ভালো রেজাল্ট করবে, এটা ভাবিনি। কিন্তু সামনে তো অনেক খরচ, যদি কেউ ওর পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে ছেলেটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।'

শাহ বাজার এএইচ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম মিঞা বলেন, 'সালমান ফারসি আমাদের মাদরাসার অত্যন্ত গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী। আমরা শিক্ষকরা তাকে যতটা পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তার স্বপ্নপূরণে সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে আসবেন, এই প্রত্যাশা করছি।'

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!