মাটিবাহী ট্রাক পড়ে দুই বছর আগেই ভেঙে গেছে সেতুর মধ্যমাংশ। সেই ভাঙা সেতুর স্থলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন লক্ষ্মীপুর সদর ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৭ গ্রামের মানুষ। প্রতিদিন এ সাঁকো পার হতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা এবং রোগীবাহী যাত্রী ও নারী-শিশুরা। জরুরি প্রয়োজনে বাসিন্দাদের অনেককে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং খুব শিগগিরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের সঙ্গে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ সহজ করতে কামারবাড়ি সড়কের রহমতখালী খালের ওপর লোহার স্প্যানের একটি সেতু নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। নির্মাণে ত্রুটির কারণে ১৫ বছর পর, ২০২৩ সালে একটি মাটিবাহী ট্রাকসহ সেতুর মধ্যমাংশ ভেঙে খালে পড়ে যায় এবং দুই পাশের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের অর্থ ও শ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে অস্থায়ী চলাচলের ব্যবস্থা করেন।
গনিপুর, রাজাপুর, ছোট বল্লভপুর (লক্ষ্মীপুর) এবং আমানুল্লাহপুর, কামালপুর, দেবীদেবপুর ও বালুচরা গ্রামের মানুষ ভাঙা সেতুর কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। গনিপুর এলাকার প্রায় ৮০০-৯০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পেরিয়ে বেগমগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থানীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সাঁকোটি অতিক্রম করতে গিয়ে প্রায়ই পা পিছলে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। পানিতে পড়ে বই-খাতা, স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলেন, বৃষ্টিতে সাঁকোটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বাঁশ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল তো দূরের কথা, রিকশা বা মোটরসাইকেলও যাতায়াত করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করতে এবং চন্দ্রগঞ্জ বা কামারহাট বাজারে যেতে বেগমগঞ্জের বাসিন্দাদের এই সাঁকো পেরোতে হয়। যানবাহন না চলার কারণে সবাইকেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আলেয়াপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোফাসেল হোসেন মশু বলেন, ‘দুই জেলার সীমান্ত হওয়ায় সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাত গ্রামের মানুষ মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েও সুফল পাচ্ছি না। দ্রুত সেতু নির্মাণ না হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’
এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক বলেন, ‘চন্দ্রগঞ্জ কামারবাড়ি সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে রহমতখালী খালের ওপর ভাঙা সেতুটি অন্তর্ভুক্ত করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’
স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ ৭ গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতে দূর্ভোগ লাগবে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।