ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপি নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতাসহ ১৩ জনের নামে মামলা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:০৬ পিএম
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা কাউছার মানিক বাদল।

লক্ষ্মীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহিরকে (৫০) কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য কাউছার মানিক বাদলসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মামলার দ্বিতীয় আসামি কাউছার ফেসবুকে সক্রিয় থাকলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় রোববার (১৬ নভেম্বর) ভোরে আটক ইমন হোসেন (২১), আলমগীর হোসেন (৪০) ও হুমায়ুন কবির সেলিমকে (৫০) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

এদিকে কাউছার গ্রেপ্তার না হলেও ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। মামলার এজাহারের ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা কোনো কথা, বাদী এই আইরিন কে?’ আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার ৩ ভাইরে মামলা দিয়ে মামলার মেরিট নষ্ট করে দিছেন, বাদী জহিরের দ্বিতীয় বউ।’

ইমনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ দিয়ে তিনি আবার লিখেছেন, ‘ইমন ছেলেটাকে ধরে নিয়েছে, ঘটনার সময় সে ২ নম্বর পোলে মামুনের দোকানে ছিল। ভিডিও তাই প্রমাণ করে। জহির হত্যায় প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার জন্য এমন কিছু হচ্ছে নাকি সঠিক তদন্ত হলে রাঘববোয়াল ধরা পড়বে, তাই কি এমন হচ্ছে?’

অভিযুক্ত কাউছার পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মৃত বশির উল্যার ছেলে। অন্য অভিযুক্তরা হলেন- খোরশেদ আলম, মিজানুর রহমান মল্লিক, শামসুল আলম মল্লিক, শাহ আলম, রাহাত হোসেন বাবু, স্বপন, রিয়াজ ওরফে চিতা, আজিম হোসেন হারুন ও আব্দুল খালেক। খোরশেদ মামলার প্রথম আসামি। কয়েক মাস আগে অস্ত্রসহ তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল। জামিনে বের হয়ে আবারও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিবাদীরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সক্রিয় সদস্য এবং নেতৃত্বস্থানীয়। মৃত্যুর আগে জহির তার মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিবাদীদের বিষয়ে ভিডিও করে স্ত্রী আইরিনের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি জীবিত থাকাকালে প্রায়ই আশঙ্কা করতেন— বিবাদীরা তাকে খুন বা গুম করতে পারে। অভিযুক্তদের ভয়ে জহিরের প্রথম স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা কেউই থানায় মামলা করতে সাহস পাননি।

জহির একজন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মোস্তফার দোকান এলাকায় তার ব্যক্তিগত কার্যালয় ছিল। প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে স্থানীয় পাঁচপাড়া সড়কে ফারুকের বাড়ির সামনে তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

অভিযুক্তরা ওত পেতে ছিল। আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে গলার ডান পাশে, বুকে ও বুকের নিচে চারটি গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুলি ফাটিয়ে দেয়। মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জহির চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মনছুর আহমেদের ছেলে। ছাত্রদল কর্মী কাউছারের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জহিরের বিরোধ চলছিল।

সম্প্রতি এলাকায় একটি খেলার আয়োজন নিয়ে বিরোধ তীব্র হয়। এর জের ধরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাউছারের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। অন্যদিকে আবুল কালামের বিরুদ্ধেও ৬টি মাদকসহ মোট ৭ মামলা ও একাধিক জিডি রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী আইরিন আক্তার বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি কিছু বলতে চাই না। পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি মো. ফয়জুল আজীম বলেন, ‘নিহতের স্ত্রী মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুতই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।’