ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ইউএনও’র স্বাক্ষর জালিয়াতি, জামায়াত থেকে পদ হারালেন অধ্যক্ষ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ১০:১২ এএম
হাতীবান্ধা মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা হাছেন আলী। ছবি- সংগৃহীত

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা হাছেন আলীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর স্ক্যান করে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ফাইল জমা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এবং জামায়াত থেকে তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ‘চলতি বছরের ১৩ মে হাছেন আলীকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও শামীম মিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর তিনি ১৩টি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠান, যেখানে ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয় বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে ইউএনও শামীম মিয়া বলেন, ‘আমি ওই নিয়োগ ফাইলে স্বাক্ষর করিনি। আমার অনুমতি ছাড়াই স্বাক্ষর স্ক্যান করে ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্পষ্টত প্রতারণা ও জালিয়াতি। এ জন্য হাছেন আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজে তদন্ত করছি এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাউশি থেকে বিষয়টি জানানো হলে ইউএনওর দপ্তরে বিষয়টি প্রথম সামনে আসে।’

এদিকে স্থানীয়রা বলছে, অভিযুক্ত হাছেন আলীর বিরুদ্ধে কলেজের জমিদাতা ও এক নারী শিক্ষককে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগও রয়েছে।

কলেজের জমিদাতা জবের আলী জানান, ‘২০১২ সালে আমরা ভাইয়েরা মিলে কলেজের জন্য জমি দিই। কিন্তু ৫ আগস্ট ২০২৩ থেকে কলেজে আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। ২৩ ফেব্রুয়ারি অডিট টিমের সামনে আমাকে অপমান করেন হাছেন আলী ও তার অনুসারীরা। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

নারী শিক্ষক ছালমা বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমি ২০১৯ সালে নিয়মিত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাই এবং দায়িত্ব পালন করি। গত জানুয়ারি থেকে হাছেন আলী নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করতে থাকেন। ১৩ মার্চ তিনি ও তার লোকজন আমাকে অফিস কক্ষ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন। ইউএনও ও থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

অন্যদিকে এই নেতার ওপর অভিযোগ ওঠার পরই দলীয়ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর লালমনিরহাট জেলা কমিটি।

জেলা জামায়াত আমির আবু তাহের বলেন, ‘স্পষ্ট কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাছেন আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

হাতীবান্ধা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর এক জরুরি সভায় তাকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হাছেন আলী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। এ নিয়ে আমি এখনই কোনো মন্তব্য করব না।’