লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ব্যারাজের পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদীপারে।
রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিস্তা ব্যারাজে নিয়োজিত পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। সেখানে রোববার সকাল ৬টায় পানিপ্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টায় পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
প্রথম দফায় বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই রোববার সকাল থেকে বাড়তে শুরু করে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নদীপারের বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি ও উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে।’
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু কিছু বাড়ি পানিবন্দি হয়েছে। যেভাবে পানি আসছে তাতে বড় বন্যা হওয়ার ভয়ে আছি। সেদিনের পানি নামতে না নামতেই আবার পানি ঢুকেছে বাড়িতে। এটাই বুঝি বড় বন্যা হবে।’
হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকাল থেকে হুহু করে পানি বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেই আমার ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। রবিবার দুপুর ১২ টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে। তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘তিস্তাপাড় প্লাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গেল বন্যায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ চাল বিতরণ করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। কবলিতদের তালিকা করে পুনরায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে। সার্বক্ষণিকভাবে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’