কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়উ গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। এ নিয়ে এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ছয়জনকে গ্রেপ্তার-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। গ্রেপ্তার ছয়জন হলেনÑ বায়েজ মাস্টার, মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আউয়াল, আতিকুর রহমান, দুলাল ও আকাশ। তাদের গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ।
তিনি বলেন, আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়াসহ কয়েকজনের ইন্ধনে এই মব ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী এলাকায় মোবাইল চুরিকে ইস্যু করে এই মব তৈরি করা হয়।
লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ১ জুলাই ওই এলাকার বোরহান নামে এক তরুণ একজন স্কুলশিক্ষকের একটি মোবাইল ফোন চুরি করে। সে ধরা পড়ে, এরপর তাকে স্থানীয়রা মারধর করে। এ নিয়ে মূলত এলাকায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। র্যাবের কর্মকর্তা বলছেন, গত ৩ জুন যে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে একজন জোনাকি আক্তার। এই জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের বাড়ি মোবাইল চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত রোহানের বাড়ির পাশে। বোরহান যখন মোবাইল চুরি করে ধরা পড়ে, তখন তার বাবা জোনাকির পরিবারের কাছে সহযোগিতা চান। যাতে তার ছেলেকে বেশি মারধর না করা হয়। এরপর জোনাকি আক্তার, তার মা রোকসানা আক্তার রুবি ও ভাই রাসেল মিয়া বোরহানকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ১ জুলাই এ নিয়ে সালিশ হয়। সালিশ করেন মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া। তবে কোনো মীমাংসা ছাড়াই সালিশ শেষ হয়। এমনকি বোরহানকেও তার পরিবার আর খুঁজে পাচ্ছিল না। এখনো তাকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বোরহানের বাবা স্থানীয় থানায় বাচ্চু মেম্বারসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। এতে বাচ্চু মেম্বারসহ স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়। ২ জুলাই রাতে ওই এলাকায় একটি সভা হয়। ওই সভায় রুবি আক্তারের পরিবারকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন বাচ্চু মেম্বারসহ অন্যরা। ৩ জুলাই সকালে চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বার বাচ্চুসহ শতাধিক ব্যক্তি রুবি আক্তারের ওই বাড়িতে যান। এ সময় রুবি আক্তার ও মেয়ে রোকসানার সঙ্গে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কথা কাটাকাটি হয়, একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর সেখানে উপস্থিত সবাই হামলা করে। তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করে তারা। নিহতরা হলেন রোকসানা আক্তার রুবি, তার মেয়ে জোনাকি আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়া। এ ঘটনায় আরও দুই মেয়ে আহত হন, তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ২ জুলাই মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করেন। নিহত রাসেল মিয়াকে ওই রাতেই ফোন করে হুমকি দেয় কয়েকজন। এরপর ৩ জুলাই তাদের হত্যা করা হয়। ঘটনাটি পরিকল্পিত বলেও জানান তিনি।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে নিহত রোকসানা আক্তারের মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার পর যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেনÑ কড়ইবাড়ী গ্রামের মো. সবির আহমেদ ও মো. নাজিমউদ্দীন বাবুল।
তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক। তিনি বলেন, মুরাদনগর পুরুষশূন্য হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা নিজেরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা হয়তো আত্মগোপনে চলে গেছেন। কিন্তু যারা জড়িত নন, তাদের পালিয়ে থাকার কোনো মানে নেই। কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না, হয়রানি করার কোনো প্রশ্নই নেই।
আপনার মতামত লিখুন :