মাদারীপুরের শিবচরে নদী থেকে মারিয়া নামে তিন মাসের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে চুরির কথা জানালেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তানকে নদীতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শিবচর পৌরসভার উপশহর এলাকার ময়নাকাটা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোক ও চাঞ্চল্য।
মঙ্গলবার দুপুরে শিশু মারিয়াকে নিয়ে তার মা কানন আক্তার বাসা থেকে বের হন। প্রায় এক ঘণ্টা পর তিনি একাই কোলশূন্য অবস্থায় বাসায় ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর থেকেই শিশুটির খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নিখোঁজের সংবাদ প্রচার করা হয়। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যায় ময়নাকাটা নদীতে ভাসমান অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশু মারিয়াম শিবচর পৌরসভার ডিসি রোড এলাকার মাওলানা রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার মা কানন আক্তার স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষিকা।
পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, কানন আক্তার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। সন্তান জন্মের পর থেকেই তার মানসিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
প্রতিবেশীরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত রহস্যজনক বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দাবি, মায়ের কোল থেকে সন্তানের নিখোঁজ হওয়া এবং একা ফিরে আসা স্বাভাবিক নয়।
অনেকেই ধারণা করছেন, তিনটি কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় মানসিক চাপে কানন আক্তার এ ঘটনা ঘটাতে পারেন।
শিশুর বাবা মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীর মানসিক সমস্যা রয়েছে। দুপুরে সে মেয়েকে নিয়ে বের হয়েছিল। পরে একা ফিরে আসে। সারাদিন খোঁজার পর সন্ধ্যায় মরদেহ পাওয়া গেল।
সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) এ সালাউদ্দিন কাদের বলেন, শিবচরের ময়নাকাটা নদী থেকে শিশু মারিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটির মা স্বীকার করেছেন, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় নদীতে শিশুটিকে ফেলে দেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার পর এলাকায় তীব্র শোকের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি পরিবারের ও সমাজের উদাসীনতা নিয়ে।
স্থানীয়রা বলছেন, মানসিক অসুস্থতা সঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা না করার কারণে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। একটি ফুটফুটে জীবনের এমন করুণ পরিসমাপ্তি শিবচরবাসীর হৃদয়কে ব্যথিত করেছে।