ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

সড়ক নয় যেন মরণফাঁদ, জনদুর্ভোগে গৌরীপুর

শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কটির বেহাল দশা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কটির অবস্থা বর্তমানে চরমভাবে জরাজীর্ণ। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে ম্যাকাডাম নষ্ট হয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ফাটল, কোথাও ভাঙাচোরা, আবার কোথাও সড়কজুড়ে বিস্তৃত খানাখন্দ।

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই আশপাশের পানি এসে রাস্তায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গৌরীপুর-বেখৈরহাটি সড়কের সবচেয়ে নাজুক অবস্থা গৌরীপুর পৌর শহরের বালুয়াপাড়া এলাকায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ও সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়কের দুরবস্থার কারণে যাত্রী ও চালকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

গৌরীপুর পৌর শহরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া, মদন, খালিয়াজুরী ও আটপাড়া উপজেলার বহু মানুষ এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল।

গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কটিতে মালবোঝাই ট্রলি উল্টে যায়। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বারবার সংস্কার করলেও দুর্নীতি, অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের কারণে সড়কটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমানে খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কটির বিভিন্ন অংশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

বালুয়াপাড়া বাজার থেকে বোকাইনগর ইউনিয়ন পর্যন্ত অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। অতিবৃষ্টির কারণে এসব গর্তে পানি জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় হ্যান্ডট্রলি চালক সিরাজ মিয়া জানান, বুধবার ধানবোঝাই ট্রলি নিয়ে যাওয়ার সময় বালুয়াপাড়ায় গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হই। এতে প্রায় ১০ হাজার টাকার ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একইদিন দুপুরে ‘সামিয়া আক্তার পরিবহন’ নামের একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা গর্তে পড়ে উল্টে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। চালক ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত এই সড়কে অটো চালাই। বছরের পর বছর এভাবেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।’

 

গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কে গাড়ি চলাচলে অসুবিধা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম ও শিক্ষার্থী রাজন জানান, বেহাল সড়কের ছবি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করছি। ভিডিওসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে জিওবি প্রকল্পের আওতায় মেসার্স জামির ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করে। পরে স্থানীয় পৌরসভা ও বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু অংশ মেরামত করলেও তা পরিকল্পনার অভাবে বেশিদিন টেকেনি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি জরুরি প্রকল্প স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।’

গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কে আটকে যাওয়া অটোরিকশাটি ঠেলে পার করে দেন স্থানীয়রা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আমীন পাপ্পা বলেন, ‘সড়কের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা ও খানাখন্দের কারণে যাত্রীদের চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সাময়িক কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, ‘সড়কটি এলজিইডির অধীনে। তবে যেহেতু যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তাই পৌরসভার তত্ত্বাবধানে খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতা দূর করতে সাময়িক সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই জনভোগান্তি কিছুটা লাঘব হবে।’