ঢাকা শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিত চক্রটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:৪২ এএম
আটক শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিতে এসে আটক তিন জনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চক্রটি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সির (ভর্তি–ইচ্ছুকের পরীক্ষা) মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে আটক তিন জনকে থানায় হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থীও আছেন। এর আগে বুধবার (৬ আগস্ট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিচেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আটককৃতরা হলেন, ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন, জেলার ত্রিশাল উপজেলার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ওবায়েদ হাসান ও প্রক্সি দিতে আসা পনির উদ্দিন খান মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ভর্তির সময় স্বাক্ষরে অসংগতি ও প্রবেশপত্রের সঙ্গে চেহারার অমিল দেখে ওবায়েদকে প্রশ্ন করা হলে অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে শুরু করেন।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং মেধা তালিকায় ৭৬তম অবস্থানে উত্তীর্ণ হোন। তাঁকে যাচাই করতে বিষয়ভিত্তিক সাধারণ প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দিতে পারছিলেন না। তখন ওবায়েদের সঙ্গে আসা পনির উদ্দিনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

পনির নিজেকে ওবায়েদের ভাই পরিচয় দিয়ে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। পরে ওবায়েদের মুঠোফোন নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পনিরের সাথে কথোপকথনের বিষয়টি জানা যায়। সেখানে কীভাবে স্বাক্ষর করা হবে এবং ভর্তির লেনদেনের বিষয়ে আলাপ করছিলেন তাঁরা। ভর্তি সম্পন্ন হলে পনিরকে এক লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। 

একপর্যায়ে পনিরের মুঠোফোনে সালমান ফারদিনের কল আসে। পরে তাঁকেও ডাকা হয়। সালমানের মুঠোফোনটি জব্দ করলে সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এইচএম কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ জন আগেই ভর্তি হয়েছেন। বাকি একজন প্রার্থী (ওবায়েদ হাসান) ভর্তির শেষ দিন গত দুপুরের পর উপস্থিত হন।

এ সময় ভর্তির কাজে নিয়োজিত শিক্ষকেরা নিয়ম মাফিক যাচাই-বাছাই শুরু করেন। তখন দেখা যায়, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ও লেখার স্টাইল মিলছে না। এ নিয়ে যাচাই–বাছাই শুরু করলে সামনে আসে চক্রটি।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওবায়েদ জানান, তিনি নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি। এক লাখ টাকার বিনিময়ে চক্রটির এক সদস্য পনির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। পনিরের সাথে যোগাযোগ করে এভাবে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন ওবায়েদের বাবা।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান বলেন, এ চক্রের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়েই আরেকজন ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছেন। তাঁর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ওই তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভর্তি জালিয়াতি চক্রের তৎপরতা সামনে আসায় ঘটনাটি তদন্তে পাঁচ-ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিটি প্রকাশ করা হবে।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহামেদ বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। মামলা শেষে শুক্রবার তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।