বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

‘ঘুষ দিলেই হয় কাজ, না দিলেই হয়রানি’

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা ও কর্মরতরা যাদের চাহিদামতো ঘুষ দিলেই হয় সব কাজ, না দিলেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।

সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ— ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদা, প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ। তারা তিনজন মিলে এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে যেন ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ও মিরাট ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল একটি, কাশিমপুরে। ভূমিসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রায় সাত মাস আগে মিরাট ইউনিয়নের হামিদপুর বাজার এলাকায় নতুন করে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস করা হয়। ওই অফিসে উপসহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন দুরুল হুদা এবং প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ।

অভিযোগ উঠেছে— খাজনার অনুমোদন, খাজনার চেক করে দেওয়া, খারিজের প্রতিবেদন-প্রস্তাব, হোল্ডিং এন্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিবেদনের জন্য দুই হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার, ২০ হাজার, এমনকি লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন উপসহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদা।

সেবাপ্রত্যাশীরা তাকে চাহিদামতো ঘুষ দিলেই কাজ হয়, না দিলেই মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হতে হয়। তার বিরুদ্ধে অফিসে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে। তার মদদে দুইজন দালাল সবসময় অফিসে থাকে, যারা সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

অফিসের প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগের বিরুদ্ধেও অভিযোগের অন্ত নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ— জমির খারিজ (নামজারি) করিয়ে দিতে তারা ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কেউ ঘুষ দিয়েও দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হন।

নিয়ম না থাকলেও টাকার বিনিময়ে গোপনে প্রস্তাবিত খতিয়ান দিয়ে থাকেন তারা। খারিজ শেষে কেউ হোল্ডিং খুলতে গেলে বা খাজনা দিতে চাইলে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে পরে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন।

মিরাট ইউনিয়নের ধনপাড়া গ্রামের মেঘনা নামে এক নারী জানান, জমি খারিজের পর খাজনা দেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু নায়েব অনুমোদন দেননি। প্রায় ৬ মাস ধরে অফিসে ঘুরছেন, তবু খাজনা দিতে পারেননি।

জালালাবাদ গ্রামের রায়হান রাফু জানান, জমির খারিজের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ মিসকেস করায় নায়েব দুরুল হুদা ও তার দালাল প্রথমে ১৫ হাজার টাকা নেন। পরে বলেন, এই টাকায় হবে না, মোট ৯৭ হাজার টাকা লাগবে। কয়েক ধাপে টাকা নিলেও আজ পর্যন্ত কাজ হয়নি বা টাকা ফেরত দেননি।

মান্দা উপজেলার তুরুকবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, খাজনা দিতে গেলে নায়েবের দালাল ২ হাজার টাকা দাবি করে। না দেওয়ায় খাজনা হয়নি। আবার জমির হোল্ডিং খুলতে গেলে ৩১ হাজার ৮১৮ টাকা দাবি করেন, না দেওয়ায় হোল্ডিংয়ে লাল কালির দাগ দিয়ে দেন।

হরিশপুর গ্রামের সোলাইমান জানান, ৪৫ শতাংশ জমির খাজনা দেওয়ার জন্য পিওন সোহাগ ১৩ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় খাজনা করেননি।

মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামের ফাহাদ জানান, খাজনা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস ও সোহাগ ১০ হাজার টাকা নেন, অথচ খাজনার পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৭২ টাকা।

মিরাট গ্রামের ছাত্তার জানান, ৮ শতাংশ জমির খারিজের জন্য সোহাগ ১০ হাজার টাকা দাবি করেন, পরে ৭ হাজার টাকা নিয়ে কয়েক মাস ঘুরিয়ে খারিজ করে দিয়েছেন। এখন হোল্ডিং খোলার জন্য ঘুরছেন। একইভাবে ফজলু সরদার ও মজনু সরদার ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজ করিয়েছেন, কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বাকি টাকা দিলেও সমাধান হয়নি।

স্থানীয় ইয়াকুব জানান, কুদ্দুস ও সোহাগ প্রস্তাবিত খতিয়ানের জন্য তার কাছ থেকে ২,২০০ টাকা নেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব না।’ 

প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ ফোন রিসিভ করেননি।

রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ নওশাদ হাসান বলেন, ‘বিষয়গুলো আমার জানা নেই। অভিযোগএলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Shera Lather
Link copied!