সিদ্ধিরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে। কিশোর গ্যাঙের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবসাও চলছে। এসব কারণে সিদ্ধিরগঞ্জবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয়রা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের এলাকাভিত্তিক টহল না থাকার কারণে ও পুলিশি কর্মকাণ্ডে সঠিক মনোযোগ না দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দাবি, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে মাদক চোরাকারবারী ও কিশোর গ্যাঙের কারণে। পুলিশ শুধু খুচরা মাদক বিক্রেতা গ্রেপ্তার করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত চার মাসে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ৯টি হত্যাকাণ্ডসহ ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিটি পাড়ায় মাদকদ্রব্য অবাধে বেচাকেনা হচ্ছে, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর গ্যাঙের আনাগোনা থাকে।
গত ৮ এপ্রিল মিজমিজি এলাকায় ট্রিপল মার্ডার ঘটে। মো. ইয়াছিন নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী লামিয়া আক্তার ও বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে জবাই করে হত্যা করেন। পরে একই স্থানে তার চার বছরের ছেলে লাবীব আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাটি চাপা দেন। ১১ এপ্রিল পুলিশ লাশ উদ্ধার ও হত্যা মামলায় ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করে।
এর পর গত ৪ মে গোদনাইলের এনায়েতনগরে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে ১৫ বছর বয়সী মো. ইয়াছিন নামে এক কিশোর নিহত হন। ২৩ মে দক্ষিণ কদমতলী ভান্ডারীপুল ধনকুন্ডা এলাকায় তর্কে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে ১৬ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ খান রায়হান (পাভেল) খুন হন।
এদিকে গত ১৪ জুন পাইনাদি নতুন মহল্লায় বাড়িয়ালা আবুল বাশার ও ভাড়াটিয়া মো. সোহাগের মধ্যে তর্কের একপর্যায় মো. সোহাগের মারধরে গুরুতর আহত আবুল বাশার মারা যান।
এর পরদিন ১৫ জুন হিরাঝিল ইসলামী ব্যাংক এলাকা থেকে আদমজী ইপিজেডের ম্যানেজার মো. ইলিয়াছ হোসেন ও হিসাব রক্ষক নুরুল ইসলাম ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে আদমজী ইপিজেডে যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন। অভিযুক্তরা একটি প্রাইভেটকারে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ আসামিদের ধরতে পারেনি।
১৬ জুলাই পশিচম কলাবাগ এলাকায় জমিজমা বিরোধের জেরে মো. ইসমাইল মিয়ার দুই ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী মা মিনু বেগমকে মারধর করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মিনু বেগম মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. ইব্রাহিম সৎ ভাইদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
১৮ জুলাই নিমাইকাসারী রসুলবাগে মাদক টাকার ভাগবাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে মাসুকুল ইসলাম জনিকে হত্যা করে নির্মাণাধীন তাকওয়া টাওয়ারের লিফটের ফাঁকা জায়গায় ময়লা পানিতে ফেলে রাখা হয়। পুলিশ অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে।
২৫ জুলাই রাতে মিজমিজি বাতানপাড়া ক্যানেলপাড়ে ইব্রাহিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. বিল্লাল হোসেন স্ত্রী ইতি আক্তারের পরকীয়ার অভিযোগে ঝগড়ার একপর্যায়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে।
সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, থানার পুলিশি কার্যক্রম ভ্যাটার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়াভাবে অপরাধ চালাচ্ছে। অনেক সময় ছিনতাই হয়েও নিরাপত্তাহীনতার কারণে কেউ থানায় অভিযোগ করতে চান না।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম জানান, ‘উদ্ধারকৃত ১৪টি লাশের মধ্যে কয়েকটি অপমৃত্যু এবং বাকি হত্যাকাণ্ডের মামলায় সব আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আসামি ধরতে পারেননি।