ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জানালেন বাণিজ্য সচিব

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে কাজ  করছে সরকার, বাধা প্রতিযোগী দেশ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১২:৪০ এএম

বাংলাদেশ সরকার স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া ‘উচিত হবে না’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। কারণ বিরোধিতা করছে ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিড আয়োজিত এক কর্মশালায় ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ নিয়ে কথা বললেন বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি গ্র্যাজুয়েশন সামনে রেখে... হ্যাঁ, ডেফিনেটলি আমি গত পরশু একটা বিদেশি টিমের সঙ্গে কথা বলেছি, গ্র্যাজুয়েশন ডেফার করার জন্য। এটা আমরা একটু লো ভয়েসে করছি।’

কেন এ বিষয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় পেছাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাব আনতে হয়। বাংলাদেশ এরই মধ্যে একবার এনেছে। এখন নতুন করে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ থেকেও বাধা আসছে জানিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে যারা কম্পিট করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বন্ধু দেশ যাদের আপনারা অ্যাপারেন্টলি মনে করেন, তারাই প্রথম আমাদের এটার বিরোধিতা করে। জাপান বিরোধিতা করে। টার্কি বিরোধিতা করে। ইন্ডিয়া বিরোধিতা করে। আমেরিকা বিরোধিতা করে।

তিনি বলেন, ‘আপনি তাহলে কীভাবে সাধারণ পরিষদের সেশনে পাস করাবেন? কাজেই আমরা তাদেরই (ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র) টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স নিচ্ছি। এই যে যারা বিরোধিতা করছে, তাদের দিক থেকে নেওয়ার চেষ্টা করছি। সো দ্যাট তারা বিরোধিতাটা না করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটা চেষ্টা করছি, ধীরে ধীরে অগ্রসর করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করতে। যদি আমরা তিন বছর ডেফার করতে পারি, তাহলে সেটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে। আমরা কাজ করছি। সে বিষয়ে এক্সপার্টদের ওপিনিয়ন নিচ্ছি। আশা করি, আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করব না। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৮ সালে। চূড়ান্তভাবে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতির সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায় দুই বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের।’

বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপের রপ্তানি বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়ে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ২০২৬ সালের পর সেই সুবিধা আর থাকবে না। সে কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন সময় এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। গত ২৪ আগস্ট দেশের শীর্ষ ১৬টি বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা উত্তরণ তিন থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা হারানো, ওষুধ ও তৈরি পোশাকশিল্পের সংকট মোকাবিলা এবং বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতির জন্য এই অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন বলে তারা দাবি পেশ করে। এরপর সরকারও সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে।

র‌্যাপিডের অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে চিন্তা না করে ‘অলটারনেটিভ ইনসেনটিভ’ বাড়ানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রজেক্ট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। আপনি এই ১০ হাজার কোটি টাকা ইনসেনটিভ আকারে দেন, দেখেন কী অবস্থা হয় আমাদের ইন্ডাস্ট্রির। সেই ধরনের প্রচেষ্টা করতে হবে।’