ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজধানী ঢাকার চার অভিজাত এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০২:১৮ এএম
প্রতীকী ছবি।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ–সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। ডিএনসিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মামুন-উল হাসানের স্বাক্ষরিত ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, শব্দদূষণ বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি-৪ অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। বিষয়টি আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানান, অক্টোবর মাস থেকে পুরো বছর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ হর্ন না বাজানোর বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। সামনের বছর থেকে এই এলাকায় হর্ন বাজালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নীরব এলাকা ঘোষণার বিষয়ে গুলশান সোসাইটির সভাপতি ওমর সাদাত বলেন, যানবাহনের হর্নের যন্ত্রণায় মানুষের বাঁচার কোনো উপায় নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণার চেষ্টা চলছিল। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নীরব এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ওমর সাদাত আরও বলেন, এ ঘোষণার মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এসব এলাকায় হর্নের ব্যবহার বন্ধে কাজ করা হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গুলশান সোসাইটি ও অন্যান্য এলাকার সোসাইটির প্রতিনিধিদের নিয়ে হর্ন বাজানো বন্ধে প্রচার চালানো হবে। এই এলাকাকে হর্নমুক্ত নীরব এলাকার মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

রাজধানী ঢাকায় নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষিত অন্যান্য এলাকাগুলো হচ্ছে—হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ (বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা), সচিবালয়, আগারগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

শব্দদূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে বাংলাদেশে চিহ্নিত। বিশেষ করে ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকায় শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। শব্দের প্রধান উৎস যানবাহন। এর হর্ন, ইঞ্জিন ও চাকার কম্পন মূলত দূষণের জন্য বেশি দায়ী। এ ছাড়া আছে নির্মাণকাজ বা ইট ও পাথর ভাঙার শব্দ, কলকারখানা, জেনারেটর এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাইকিং।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় দিনের সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪৫ ডেসিবেল সহনীয়। আর বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের ৭০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনের ৭৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। এ সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ নানা রোগ বাড়ছে রাজধানীতে। আর শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, বধিরতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কম ঘুম হওয়া, হৃদ্‌রোগ, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্ন হওয়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। স্বল্পমেয়াদি শব্দদূষণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি শব্দদূষণ শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার ফলে বিরক্তি, নেতিবাচকতা, রাগ, ক্লান্তি, চাপা উত্তেজনা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিহার, ব্যক্তিগত ঝুঁকি বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা কমে যায়।