এক সময়ের গৃহশিক্ষক মোবারক হোসেন এখন নরসিংদীর এক প্রভাবশালী ঠিকাদার। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল অব. মো. নজরুল ইসলাম হীরু'র ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত এই মোবারক হোসেনের সম্পদের পরিমাণ এখন শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নরসিংদী শহরের ব্যস্ততম এলাকা বাসাইলে অনুমোদনহীনভাবে নির্মিত পাঁচতলা ভবনের মালিক মোবারক হোসেন। যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। অথচ এক সময় তার পরিবার ছিল আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল; পিতা ছিলেন জুট মিলের শ্রমিক।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোবারক হোসেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর থেকেই তার আর্থিক ও প্রভাবশালী উত্থান শুরু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় তিনি একাধারে নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলার প্রায় সব সরকারি হাসপাতালের ঠিকাদারি কাজ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন।
বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ, সেবাকর্মী নিয়োগ ও ষ্টেশনারি সরবরাহের নামে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোবারকের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স এম.এইচ এন্টারপ্রাইজ’ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ২৬ জন কর্মচারীর প্রকৃত বেতনের অর্ধেকেরও কম অর্থ প্রদান করেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিজনের মাসিক বেতন ১৬,১৩০ টাকা হলেও মোবারক প্রতি কর্মচারীকে দিয়েছেন মাত্র ৮ হাজার টাকা। এভাবে ৫৭ মাসে ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ আরও রয়েছে, মোবারক তার নিয়োজিত কর্মচারীদের খালি চেক স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন এবং নিজেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আংশিক বেতন দিয়ে বাকিটা নিজের কাছে রাখতেন। এসব অনিয়ম ফাঁস হওয়ার পর বেশ কয়েকজন কর্মচারী তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ৯ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং তাদের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবারক হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি ঠিকাদারি করে উপার্জন করেছি, কোনো অনৈতিক কাজ করিনি। তবে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান এবং ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর মাধ্যমে সাংবাদিককে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টাও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুষ্ঠু তদন্ত করলে মোবারক হোসেনের অবৈধ সম্পদের উৎস ও দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পাবে।
তারা দাবি করেন, এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হোক।
আপনার মতামত লিখুন :