ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

চিকিৎসায় আশার আলো ছড়াচ্ছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:১০ পিএম
নদীমাতৃক বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দ্বারে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে দুই যুগ ধরে কাজ করছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নদীমাতৃক বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দ্বারে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে দুই যুগ ধরে কাজ করছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’। এটি একটি জাহাজের ওপর স্থাপিত দাতব্য হাসপাতাল। দেশের বিভিন্ন নদীঘেঁষা এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা দিয়ে আসছে।

সম্প্রতি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার দড়িসোম এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর করেছে ভাসমান এ হাসপাতাল। গাজীপুর ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার দুই তীরের হাজারো মানুষ প্রতিদিন এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন মাত্র ৫০ টাকার টিকিটে।

হাসপাতালটি পরিচালনা করছে ‘ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (আই.এফ.বি)’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘জীবন তরী’ চালু হয়। শহর থেকে দূরে নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষের কাছে আধুনিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতেই এ উদ্যোগ।

১২ শয্যার হাসপাতালটিতে বর্তমানে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন— একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চক্ষু চিকিৎসক ও একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসক। রয়েছেন তিনজন নার্স, দুজন কর্মকর্তা ও মোট ৩০ জনের জনবল। এখানে প্লাস্টিক সার্জারি, হাড়ভাঙা বা পঙ্গুজনিত রোগ, ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগের অপারেশনসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটে ভাসমান একটি সিঁড়ি দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে প্রবেশ করছেন। হাসপাতালের ভেতরে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে বিভাগ, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, পৃথক ওয়ার্ড ও বহির্বিভাগ। এ ছাড়া রোগী পরিবহনের জন্য রয়েছে দুটি স্পিডবোট।

হাসপাতালের প্রশাসক এ.কে.এম সহিদুল হক বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২২৫ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানকার চিকিৎসায় অনেকেই সন্তুষ্ট। আমাদের এখানে এক থেকে দেড় বছর অবস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ বলেন, ‘জীবন তরী অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে। এরকম উদ্যোগ মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গণমাধ্যমের সহায়তায় এর বার্তা আরও ছড়িয়ে পড়ুক।’

চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীদের কেউ কেউ বলেন, ‘মানুষ সাধারণত হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এখানে তো হাসপাতালই চলে এসেছে আমাদের ঘাটে। এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি।’

সরকারি ছুটি ও শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালু থাকে।