নাটোরে পারস্পরিক সম্পর্কের দ্বন্দ্বের জেরে নিজ হাসপাতালের কক্ষে একান্ত সহকারী (পিএস) আসাদের হাতে খুন হয়েছেন ডা. এ এইচ এম মো. আমিরুল ইসলাম। এ ঘটনায় পুলিশ আসাদকে গ্রেপ্তার করেছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৬টার দিকে শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় জনসেবা হাসপাতালের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি আসাদ বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার ফকিরপাড়া এলাকার ইলিয়াস আকন্দের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, গত তিন বছর ধরে আসাদ ডা. আমিরুল ইসলামের একান্ত বিশেষ সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময়ে ডা. আমিরুল, আসাদ এবং হাসপাতালের এক নারী কর্মীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন আগে এই সম্পর্কের কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
গত ২৫ আগস্ট ডা. আমিরুল ওই নারী কর্মী ও আসাদকে এক কক্ষে ডেকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং পরে আসাদকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসাদ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি বগুড়া থেকে একটি বোরখা ও দুটি ছুরি সংগ্রহ করেন। ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে বোরখা পরে জনসেবা হাসপাতালের তৃতীয় তলায় প্রবেশ করে রাতের অন্ধকারে ডা. আমিরুলের কক্ষে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন।
রাত ১টার দিকে ডা. আমিরুল রুটিন ভিজিট শেষ করে কক্ষে ফেরেন। প্রতিদিনের মতো ঘুমের ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ সেবন করে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে, আনুমানিক ৪টার দিকে, আসাদ ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে তার গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর সকাল ৬টার দিকে কৌশলে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান।
পুলিশ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় জনসেবা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ডা. আমিরুলের কক্ষ থেকে তার গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ এবং হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য আলামত উদ্ধারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
ডা. আমিরুল ইসলাম নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান আলীর ছেলে। তিনি বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের জেলা আহ্বায়ক, বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জিয়া পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।