শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের পর নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। ভোরে শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত থাকা এলাকা বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) একেবারেই ফাঁকা। ইপিজেডের মূল ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরালো অবস্থানে রয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীন বিডি কারখানার শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরেই ২৩ দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছিল। শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে গত সোমবার রাতেই কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরের দিন সকালে কর্মস্থলে এসে কারখানা বন্ধের খবর পেয়ে শ্রমিকরা ইপিজেডের সামনের সড়ক ও মূল ফটকে অবস্থান নেন, অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের প্রবেশও বাধা দেন।
পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ইপিজেড নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত আট শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং হাবিব নামের এক শ্রমিক নিহত হন। এরপর বেপজা কর্তৃপক্ষ ইপিজেডের সকল কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে।
স্থানীয়রা জানান, গতকালের ঘটনার পর পরিস্থিতি উত্তেজিত ছিল, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ইপিজেড মোড়ে দোকান করা রইছুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় বেচাবিক্রি বন্ধ। এখানে যে আসে, সবাই ইপিজেডের উদ্দেশ্যে আসে।’
বেপজা নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘কোম্পানির মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যোগাযোগ ঘাটতি এবং ভুল বোঝাবুঝি আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ। আমরা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান করছি।’
জেলা পুলিশ সুপার এ.এফ.এম. তারিক হোসেন খান জানান, নিহত হাবিবের পরিবার কোনো দাবিদাওয়া না করায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। ইপিজেডে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ম্যানেজমেন্টের কোনো গাফিলতি খুঁজে দেখবে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে ইপিজেড খোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শ্রমিক হত্যার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানান, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের ওপর মিথ্যা মামলা দেওয়া যাবে না। নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করার দাবি করেছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (পাঁচটা) ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের বৈঠক চলছিল। বৈঠক কখন শেষ হবে তা এখনো জানা যায়নি।