ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

নিম্নচাপের প্রভাব

নিঝুমদ্বীপে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে বসতঘর, বাজার, রাস্তাঘাট ও কৃষিজমি। 

শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করে, দুপুর নাগাদ হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ঢুকে পড়ে দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও আশ্রয়ের তীব্র সংকটে পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা।

বসতঘরের ভেতরে উঠেছে হাঁটুপানি; রান্নাঘর, উঠান—সব পানিতে ডুবে গেছে। স্ত্রী-সন্তান ঠাঁই নিয়েছে খাটের ওপর। গবাদিপশুগুলো দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির পাশের কাঁচা সড়কে। চারদিকে শুধুই পানি আর পানি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিলন বলেন, ‘আমাদের জীবন এমনই—নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। এবারের বর্ষায় তেমন মাছও নেই, ঋণ করে চলছিলাম। এখন ঘরে চুলা জ্বালানোর কিছু নেই। পুকুরে লবণ পানি ঢুকে মাছ মরে গেছে, ফসল নষ্ট। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।’

আরেক বাসিন্দা মো. রাসেল জানান, ‘সকাল ১০টা থেকে টানা বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে পুরো নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। নামার বাজার, বন্দর কিল্লা, ইসলামপুর, মোল্লা গ্রামসহ প্রায় পুরো ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। গরুর খাবার নেই, মাছের ঘের ভেসে গেছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা এমন দুর্যোগে পড়ি। এবার পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত। বেড়িবাঁধ না থাকায় পানি ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। হাজারো পরিবার এখন পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ত্রাণ, নিরাপদ পানি বা টেকসই কোনো ব্যবস্থাও নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর এই দ্বীপের মানুষ ঘর হারায়, জীবিকা হারায়। অথচ এখনো বেড়িবাঁধ বা স্থায়ী কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কবে মিলনেরা ঘরে ফিরতে পারবে? কবে এই দ্বীপের মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারবে—এই প্রশ্নটাই যেন ভাসছে পানির সাথে।’

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘হাতিয়ায় মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে। জোয়ারের পানি ধীরে ধীরে নামছে, তবে রাতে আবার জোয়ার হতে পারে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কোথাও ক্ষতির তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’