ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

সাইকেল মেকানিকের ছেলে বিসিএস ক্যাডার

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ১২:১০ পিএম
শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. আশিকুর রহমান। ছবি- সংগৃহীত

এবারের ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মো. আশিকুর রহমান। এমন সাফল্যের পেছনে তার বাবা ও ভাইয়ের বিশেষ অবদান রয়েছে বলে জানা গেছে।

আশিক পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম-মৃত আলেয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। চার ভাইয়ের এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি।

আশিক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা একজন সাইকেল মেকানিক ছিলেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। এরপর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমার সাফল্যে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবার। সাইকেল মেরামতের কাজ করে সব খরচ চালিয়েছেন। কোনো অভাব রাখেননি। মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। আর একজন আমার মেজ ভাই আমিরুল ইসলাম সবুজ। ডিপ্লোমা শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে যান অভাবী সংসারের হাল ধরতে। নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এই দুইজন মানুষ আমার সাফল্যের পেছনে মূল কারিগর।’

বাবার সঙ্গে ভালো লাগার স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। আবার আমি খুব দুরন্তপনা ছিলাম। বাবা সারাদিন কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরতেন। আমার যেদিন শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতো তখন কীভাবে যেন তিনি টের পেতেন। তখন সরিষার তেল আর রসুন দিয়ে গরম করে আমার বুকে মালিশ করে দিতেন বাবা। আমি সুস্থ হয়ে যেতাম।’

আশিক আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার লেখাপড়ার বিষয়ে বাবাকে কখনো কিছু ভুলে যেতে দেখিনি। খাতা, কলম যখন যেটা যে নামের আনতে বলতাম তিনি ঠিকই নিয়ে আসতেন। তিনি বাড়ির অনেক কিছু আনতে ভুলে গেলেও, আমার লেখাপড়ার কোনো জিনিস আনতে তাকে কখনো ভুলে যেতে দেখিনি। এটা আমার খুবই অবাক লাগে।’

আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাস করেন তিনি।

এরপর থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আশিক।

বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন এই পরিচয় দিতে কখনো দ্বিধা বা সংকোচবোধ করেন না আশিক। তাই দেশের জন্য, দরিদ্র মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চান এই তরুণ। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।