সোনালি আঁশখ্যাত পাট চাষে সুদিন ফিরেছে পাবনার কৃষকদের ঘরে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি বাজারে ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকেরা। এতে তাদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক-কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর কাজে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে জলাশয়গুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় পাট জাগ দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। অনেক স্থানে নারী-পুরুষ মিলে জলাশয়ে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন, আবার কোথাও পাট শুকিয়ে হাটে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক জানান, ‘চলতি বছর জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। তবে তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। বিঘা প্রতি গড়ে ৯ মণ করে উৎপাদন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফলন ও দামের দিক দিয়ে এবার পাট চাষে কৃষকেরা লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। যদিও এখনো পুরোপুরি সরবরাহ শুরু হয়নি, তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত চিত্র বোঝা যাবে।’
সদর উপজেলার মাহমুদ গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘এই বছর আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২১ হাজার টাকা।’
কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘আগে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা হতো, আর্থিক ক্ষতিও হতো। এবার সে রকম সমস্যা হয়নি, পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানি পর্যাপ্ত। এখন বাজারে উঠলেই লাভ বোঝা যাবে।’
সদরের মালঞ্চি গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এবার শ্রমিক খরচ অনেক বেড়েছে। গত বছর যেখানে ৭০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যেত, এবার দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। বর্তমানে ৩৭ থেকে ৩৮’শ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করছি।’
সাঁথিয়া উপজেলার আমাইকোলা গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী বলেন, ‘এবার পাটের ফলনও ভালো হইছে, আবার দামও ভালো পাইতেছি। মণপ্রতি প্রায় হাজার বারো শ টাকা লাভ হইতাছে।’
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাঁথিয়ায় ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। গড়ে প্রতি বিঘায় ৯ মণ করে ফলন পেয়েছেন কৃষকেরা।
গত বছর যেখানে মণপ্রতি দাম ছিল ২৭০০-২৯০০ টাকা, এবার তা বেড়ে ৩৭০০-৩৮০০ টাকায় উঠেছে। ফলে মণপ্রতি ১২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি লাভ হচ্ছে।
কৃষকেরা বলছেন, উৎপাদন খরচও বেড়েছে। শুধু শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির কারণেই মণপ্রতি খরচ বেড়েছে ১৫০-২০০ টাকা। আগে যেখানে প্রতি মণ পাট উৎপাদনে খরচ হতো প্রায় ২৫০০ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০০-২৭০০ টাকায়।
সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে ব্যবসায়ী মোতালেব জানান, ‘গত সপ্তাহে মণপ্রতি দাম ছিল ৩৯০০ টাকা, এবার তা কিছুটা কমে ৩৭০০-৩৮০০ টাকায় এসেছে। তবে এখনো কৃষকেরা ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারছেন।’
তবে অনেক কৃষকের মধ্যে আশঙ্কা আছে, সরবরাহ বাড়লে দাম পড়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সাদ্দাম মিয়া, আলতাফসহ একাধিক কৃষক জানান, ‘এখন অনেকেই অল্প করে পাট তুলে বাজারে আনছেন, পুরোটাই উঠতে আরও দুই-তিন সপ্তাহ লাগবে।’
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘আবহাওয়া, ফলন ও দাম- সবদিক বিবেচনায় কৃষকেরা এখন লাভে রয়েছেন। আমাদের হিসাবে কৃষকেরা প্রতি মণে গড়ে ১২০০ টাকা লাভ করছেন। তবে এখনো পূর্ণ সরবরাহ শুরু হয়নি, আগামী তিন-চার সপ্তাহ পরে প্রকৃত বাজার চিত্র বোঝা যাবে।’
আপনার মতামত লিখুন :