বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম

বিদ্যালয়ের ভেতরে আ.লীগ কর্মীর তিনতলা বাড়ি, শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম

বিদ্যালয়ের ভিতরে আওয়ামী লীগ কর্মীর  তিনতলা বাড়ি।       ছবি- সংগৃহীত

বিদ্যালয়ের ভিতরে আওয়ামী লীগ কর্মীর তিনতলা বাড়ি। ছবি- সংগৃহীত

পাবনার চরতারাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঝখানে জোরপূর্বক তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে নির্মিত এই ভবনের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন পাঠদান ও কার্যক্রমে ভোগান্তিতে পড়ছেন। দ্রুত ভবনটি উচ্ছেদ করে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

অভিযুক্ত আব্দুল বাতেন চরতারাপুর ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কর্মী এবং স্থানীয় সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর চাচাতো ভাই।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সুনশান নীরবতার মধ্যে চলছে স্কুলের পাঠদান। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ঘেঁষে ঠিক মাঝখানে তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

বাড়ির পূর্ব পাশে বিদ্যালয়ের একটি টিনের ঘর, পশ্চিমে আরেকটি টিনের ঘরে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। বাড়িতে প্রবেশের পথও বিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে করা হয়েছে। এ জন্য স্কুলের গেটও করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন শিক্ষকরা। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

আরও জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অফিস করার কথা বলে বিদ্যালয়ের ভেতরে একটি টিনের ঘর তোলেন আব্দুল বাতেন। এরপর ইট-বালু-খোয়া এনে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেন। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বাধা দিলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেন।

শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে গেলেও এতে কোনো প্রতিকার পাননি। এরপর যারাই প্রতিবাদ করেছেন তাদেরই নানা ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ভবন নির্মাণ করার সময় আমরা বাধা দিলে রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আসা হতো। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাতেন এসব করে গেছেন।

এ ছাড়া তিনি এ অঞ্চলে নানা অপকর্ম করে গেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভবনটির জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। ভবনটি দ্রুত অপসারণ করে সেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিম হোসেন, বিথি আক্তার, লামিয়া খাতুন বলে, স্কুলের একদম মাঝখানে শহীদ মিনার ঘেঁষে বাড়িটি করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া যায় না। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনে জায়গা হয় না। প্রতিদিন সকালে অ্যাসেম্বলিতে সমস্যা হয়, দিবসগুলোর অনুষ্ঠান করতে পারি না। মাঝেমধ্যে ময়লা-আবর্জনা ওপর থেকে ফেলা হয়। তখন দুর্গন্ধে স্কুলের মাঠে থাকা যায় না। যখন বাথরুমের ট্যাংকের মুখ খোলা হয় তখন আমরা ক্লাস করতে পারি না। ক্লাস থেকে বের হয়ে স্কুল আঙিনার বাইরে যেতে হয়। দ্রুত বাড়িটি অপসারণের দাবি জানায় তারা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, ‘বাড়িটির জন্য আমরা চরমভাবে বিব্রত হচ্ছি। লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। বাড়িটির জন্য স্কুলের গেট বানানো যাচ্ছে না। সে জন্য নিরাপত্তাও নেই। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিন জায়গা হয় না। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠান করতে গেলে জায়গা সংকুলান হয় না। তাই বাড়িটি দ্রুত অপসারণ করতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়ে গেছে। জায়গা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে পাঠদান করানো লাগছে। বিল্ডিংটি অপসারণ করা হলে ওখানে বিদ্যালয়ের জন্য ঘর করা হলে আপাতত শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমে আসবে।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও কোনো দিন কেউ শুনছেন যে বিদ্যালয়ের ভেতরে কেউ বাড়ি করে? কিন্তু আমাদের এখানে বিদ্যালয়ের ঠিক মাঝখানে জোরপূর্বক ক্ষমতার জোরে বাড়ি নির্মাণ করেছে আওয়ামী লীগ কর্মী বাতেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত এটি অপসারণ করে পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০২ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ৯ জন মিলে এই জায়গা দান করেন। এরপর ২০১৩ সালের দিকে বাতেন এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। পরে ২০২২ সালের জমিদাতাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভূয়া দলিল করে হয়রানি করেছেন। হয়রানি ও বিল্ডিং বাঁচানোর জন্য তিনি বহু কায়দা অবলম্বন করেছেন। আমরা দ্রুত বিল্ডিং অপসারণ চাই।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করি। আমি আসার আগেই ২০১৩ সালের দিকে সাবেক প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান ও সাবেক সভাপতি শামসুল আলমের আমলে জোরপূর্বকভাবে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়িটি নির্মাণের পর থেকেই ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, শিক্ষা অফিসসহ পাঁচটি অফিসে জমির কাগজসহ অভিযোগপত্র জমা দিই, কিন্তু কোথাও থেকে কোনো ফিডব্যাক পাচ্ছি না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উভয়ই কষ্টের মধ্যে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগেও কয়েকটি অফিসে ধরনা দিয়ে এসেছি বাড়িটি উচ্ছ্বেদের জন্য। বাড়িটি একদম স্কুলের ভেতরে হওয়াতে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। দিন দিন ছেলে-মেয়ে বাড়লেও একটি ঘরও করতে পারছি না। মাঝেমধ্যে বাড়িটির মলে স্কুল প্লাবিত হয়ে যায়। তখন ক্লাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমরা অনেকবার এটা নিষেধ করেছি কিন্তু তিনি শোনেন না। দ্রুত বাড়িটি উচ্ছেদ করে বিদ্যালয়ের প্রকৃত পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

অভিযুক্ত আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমিদাতার থেকে আমি ২০২২ সালের দিকে ৪ শতাংশের একটু কম জমি কিনেছিলাম। এ জন্য বাড়ি করেছি। আওয়ামী লীগের সময়ে বহুবার ভবনটি ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু ভাঙতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০১০ সালের দিকে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়।’

পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কোনো ব্যক্তিগত বাড়ি হতেই পারে না। সেখানে লেখাপড়া করবে ছেলে-মেয়েরা। সেখানে কারো থাকার জায়গা হবে কেন? বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটিতে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!