পটুয়াখালীর দশমিনায় সুতাবাড়িয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি প্রায় আট বছর আগে বালুবোঝাই একটি কার্গোর ধাক্কায় ভেঙে পড়ে। মাঝখানের অংশ নদীতে পড়ে গেলেও এতদিনেও সেতুটি মেরামত কিংবা পুনর্নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে আশপাশের অন্তত ১১টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় নদী পার হচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর গলাচিপা উপজেলা থেকে দশমিনাগামী একটি বালুবোঝাই কার্গো সেতুটির মাঝখানে ধাক্কা দেয়। এতে করে সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে পড়ে যায় এবং চার শিশুসহ মোট পাঁচজন নদীতে পড়ে যান। তাদের মধ্যে চারজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ওই এলাকার রফাতুল আলমের মেয়ে নুরসাত জাহান (৫) নিখোঁজ হয়। পাঁচ দিন পর তার মরদেহ নদীতে ভেসে ওঠে। দুর্ঘটনার সময় কার্গোটি ডুবে যায়।
ঘটনার প্রায় আট বছর পার হলেও এখনো সেতুটি মেরামত বা নতুন করে নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, দশমিনা উপজেলার খারিজা বতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এই সেতুটি দুই পাড়ের মানুষের সহজ যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল।
স্থানীয় এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যায়ে লোহার বিমের ওপর আরসিসি ঢালাই প্লেট বসিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটির মাঝখানের প্রায় ২৫ ফুট অংশ নদীতে পড়ে গেছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে যায়। খেয়া নৌকায় পারাপার হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়।
এ ছাড়া, ওই এলাকায় খারিজা বতাগী কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেতু ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সেবা নিতে আসা নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যাও কমে গেছে বলে জানা গেছে।
দশমিনা খারিজা বতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. আরাফাত বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের ডিঙি নৌকা দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। এতে সময়ও বেশি লাগে। এই সেতুটি পুনঃনির্মাণ করা হলে আমাদের যাতায়াতে অনেক সুবিধা হতো। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি সেতুটি যেন দ্রুত নির্মাণ করা হয়।’
একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া বলেন, ‘সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে ছোট ডিঙি নৌকায় নদী পার হতে হয়। নৌকায় উঠলে অনেক ভয় লাগে, বিশেষ করে বৃষ্টি হলে নদীতে স্রোত থাকে, তখন আমরা খুব ভয় পাই। সরকারের কাছে অনুরোধ সেতুটি যেন দ্রুত নির্মাণ করা হয়।’
দশমিনা বাজারের ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, ‘জমির মৃধা বাজারে আমার শ্বশুরবাড়ি। সেখানে যেতে অনেক সময় লাগে। মাঝে মাঝে যাওয়া-আসা করা যায় না। যদি সেতুটি থাকত, তাহলে দুই পাড়ের মানুষ অনেক উপকার পেত।’
ওই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, ‘ভাঙা সেতুর পাশেই একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীসহ দুই পাড়ের মানুষ আগে যাতায়াত করত। এখন সবাই খুব কষ্ট করছে। তাই আমি এই সেতুটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’