পটুয়াখালীর গলাচিপায় ইলিশ চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাসান সরদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে শিশুদের নির্যাতনের ছবি।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরমহিরউদ্দিন এলাকায় ওয়াপদা নতুন সুলিজে।
নির্যাতনের শিকার দুই শিশু হলো-আবদুল্লাহ (১০) মির্জাগঞ্জ উপজেলার মহিষকাটা এলাকার কাশেম হাওলাদারের ছেলে। অপরশিশু সাব্বির (১৪) চরবিশ্বাস চরআগস্তি এলাকার হারুন প্যাদার ছেলে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, দুই শিশুকে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় বসানো হয়েছে এবং হাতে মাছ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে স্থানীয় জেলে জয়নাল খার নির্দেশে নতুন সুলিজে নৌকায় করে নদীতে মাছ ধরতে যান আবদুল্লাহ ও সাব্বির। পরে তারা নৌকায় রাত্রিযাপন করে। পরদিন সকালে ইমরান ও কাইয়ুম প্যাদা দুই শিশুকে ধরে নতুন সুলিজ বাজারে নিয়ে আসে। সেখানে ইমরান বয়াতির গদির ১০ পিস ইলিশ মাছ চুরির অভিযোগ তুলে দুই শিশুকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন ইউপি সদস্য হাসান। পরে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে সূর্যের দিকে তাক করিয়ে রাখা হয় এবং হাতে মাছ দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত সাব্বিরের নানা শাহজাহান প্যাদা বলেন, আমার নাতি ও আরেক শিশুকে হাত-পা বেঁধে রৌদ্রে শুইয়ে তাদের হাতে মাছ দিয়ে ছবি তুলছে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেয় ইউপি সদস্য হাসান সরদার। পরে ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা দাবি করে। আমি গরিব মানুষ বলে অনুরোধ করলে আমাকে ৫ হাজার টাকা দিতে বলে। আমি দশ দিন সময় চাইলে তারা সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে শিশুদের ছেড়ে দেয়। বাসায় এসে দেখি নাতির দুই পা ফুলে কালো হয়ে গেছে। এ ঘটনার বিচার চাইতে ও সাংবাদিকদের জানানোর কারণে অভিযুক্ত হাসান সরদার ও তার সহযোগীরা বর্তমানে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।
শিশু আবদুল্লাহর অভিযোগ, তাদের সকালে নৌকা থেকে ধরে নিয়ে বাজারে এনে হাত-পা বেঁধে মারধর করে পরে রাস্তায় বসিয়ে হাতে মাছ দিয়ে ছবি তোলে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হাসান সরদার দাবি করেন, ওদের কাউকেই মারধর করা হয়নি কেবল মাছের টাকা দিতে বলা হয়েছিল। টাকা না থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে দুজনকে ৫ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী ইমরান বয়াতি বলেন, রাতে গদি থেকে মাছ চুরি করার জন্য ওদের ধরে এনেছি। তারা দৌড়ে পালিয়ে যাবে তাই হাত পা বেঁধে রেখেছি। আর চোর তাই হাতে মাছ দিয়ে ছবি তোলা হয়েছে।
তাদের পুলিশে না দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম চুরি তারা আরও করেছে, স্থানীয়ভাবে সালিসিও করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ওসি আশাদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।