চলতি বছরের ২২ শে সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসানের বদলি করে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা পদে পদায়ন করা হয়েছে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত তাকে দশমিনা উপজেলা থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়নি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা গুঞ্জন ও ক্ষোভ।
নাম প্রকাশ করা অনিচ্ছা প্রকাশে একাধিক স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, বদলির সরকারি আদেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনো দায়িত্বে বহাল থেকে নিজেকে “দ্বিগুণ ক্ষমতার অধিকারী কর্মকর্তা বলে দাবি করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও সরকারি চাকরির ইতিহাসে দশমিনায় ‘দ্বিগুণ ক্ষমতা’ নিয়ে দায়িত্ব পালন করার এমন নজির আগে কখনো দেখা যায়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তা প্রায়ই কিছু কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বলেন, আমার কিছুই করতে পারেনি কেউ বরং আমি দ্বিগুণ ক্ষমতা নিয়ে ফিরে এসেছি।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কয়েকজন অফিস স্টাফদের সঙ্গে অশোভন ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন কর্মকর্তা মুখ খুলতে অনিচ্ছুক থাকলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে দশমিনার সাধারণ জনগণ, ছাত্রছাত্রী ও সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছেন সরকারি বদলির আদেশ জারি হওয়ার পরও কেন এখনো তাকে অপসারণ করা হচ্ছে না? কোন রহস্য বা প্রভাবের কারণে তিনি এ পদে বহাল রয়েছেন?
জনগণের দাবি, এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দশমিনা উপজেলা প্রশাসনের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনবেন।
এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক শুদ্ধতা ও জবাবদিহিতা রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে তা সরকারি ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।
এর আগে, চলতি বছরের মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. এহসানুল হক ও তার স্ত্রী দশমিনা বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা মাজেদা বেগমকে নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে লাঞ্চিত করেন ইউএনও ইরতিজা হাসান।
বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই ওই স্কুল দুইটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়াতে ইউএনও'র বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোস্ট দিতে থাকেন। পরে গভীর রাতে ওই শিক্ষক দম্পতির বাসভবনে অফিসের কর্মচারী পাঠিয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে মর্মে তাদের বিবৃতি প্রদানের ভিডিও ধারন করে তা স্থানীয় ফেসবুক পেইজ দশমিনা প্রতিদিনে প্রকাশ করা হয়।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধীজনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বুধবার সকাল ১১ টা থেকে এসব কর্মসূচি পালন করেন।
এরপর বুধবার সন্ধ্যায় দশমিনা থানা-পুলিশের প্রটোকলে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এর মধ্যে শিক্ষক দম্পতিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বলে ক্ষমা চান ইউএনও। পরে ২১ আগস্ট বৃহস্পতিবার তিনি কর্মস্থলে এসে পুণরায় অফিস করেন।
পরে ২২ সেপ্টেম্বর ইউএনও ইরতিজা হাসানের বদলি খবর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। আপনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরীকে একাধিক বার ফোন দিলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বরিশাল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো আহসান হাবিব জানান, কমিশনার স্যার দেশের বাইরে আছে। দেশে আসলেই নতুন ইউএনও নিয়োগ দেয়া হবে।


