রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার এখনো ধোঁয়া, ভাঙা ইট আর আতঙ্কের ছায়ায় আচ্ছন্ন। ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন দরবারের ভক্ত রাসেল মোল্লা (২৮)। এ ঘটনায় তার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, চুরি ও জখমের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শরীফ আল রাজিব।
তিনি জানান, আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রাসেল মোল্লা ছিলেন দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার তিনি নুরাল পাগলার দরবারে প্রবেশ করেন। পরদিন শুক্রবার দরবারে হামলার সময় তার পরিচয় ফাঁস হলে ক্ষুব্ধ জনতা তাকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পরও ফের হামলার শিকার হন তিনি। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেদিন রাতেই তিনি মারা যান।
ঘটনার সূত্রপাত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার মৃত্যুকে ঘিরে। ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হলে পরদিন দরবার প্রাঙ্গণে প্রায় ১২ ফুট উঁচু করে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনাকে শরিয়তবিরোধী দাবি করে ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’ আন্দোলন শুরু করে। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তাদের বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় দরবারে, ভাঙচুর করে বাড়িঘর, আগুন দেয়। পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।
রাসেল হত্যার মামলার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আরেকটি মামলায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাসেল হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে লতিফ ইমাম ও আসলাম শেখ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি রাকিবুল ইসলাম।
গোয়ালন্দের সাধারণ মানুষ বলছেন, এক সময় ভক্তদের প্রার্থনার স্থান ছিল নুরাল পাগলার দরবার, আর এখন তা রক্তাক্ত সংঘর্ষের অগ্নিঝলসানো স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।