ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সম্মিলিত মানববন্ধন

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম
মোল্লাপাড়ার পাহাড়িয়া মহল্লাবাসীদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সম্মিলিতভাবে মানববন্ধন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার পাহাড়িয়া মহল্লাবাসীদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সম্মিলিতভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধন থেকে ঘোষণা করা হয়, ৫৩ বছর ধরে বসবাসরত পাহাড়িয়া পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে কেউ এগিয়ে এলে তা সম্মিলিতভাবেই প্রতিহত করা হবে।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংহতি জানিয়ে এতে অংশ নেয় দিনের আলো হিজড়া সংঘ, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি। অংশ নেন ভুক্তভোগী পাহাড়িয়ারাও। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি গণেশ মার্ডি এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়।

মানববন্ধনে পাহাড়িয়া পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ময়ূরী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই জমিতে আমাদের দাদারা বাস করেছেন, আমাদের বাবারাও বাস করেছেন, এখন আমরা বাস করছি। দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি—এই জমির প্রকৃত মালিক ইন্দ্রা ধোপা বহু আগে ভারতে গিয়ে মারা গেছেন। তিনি কাউকে জমি দিয়ে যাননি। এখন সাজ্জাদ আলী মালিকানা দাবি করে আমাদের উচ্ছেদ করতে চাইছেন। আমরা কোথাও যেতে চাই না।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ময়ূরী আরও বলেন, ‘আমরা এত আগে থেকে এখানে বাস করছি যে, তখন পুরো শহরই প্রায় ফাঁকা ছিল। আমাদের মহল্লা থেকেই দূর দিয়ে ট্রেন চলতে দেখা যেত, নদীর জাহাজ দেখা যেত। এতদিন পর সাজ্জাদ কেন মালিকানা দাবি করছেন?’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সহসভাপতি রাজ কুমার শাও বলেন, ‘সাজ্জাদের দলিল সঠিক নয়। এটি আদিবাসীদেরই জায়গা। সিটি করপোরেশন এখানে তাদের জন্য শৌচাগার ও টিউবওয়েল নির্মাণ করেছে। ব্যক্তিগত জায়গায় এসব হয় না। যেহেতু তারা ৫৩ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন, তাই জায়গাটি তাদের বন্দোবস্ত দিতে হবে।’

পাহাড়িয়া মহল্লার সর্দার বাবুল বিশ্বাস বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী আমাদের ভয় দেখিয়েছেন। কিছু টাকা দিয়ে জমি ছাড়তে বলেছেন। আমরা ভয়ে সরে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু এখন সবাই পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আর কোথাও যাব না। এই বাড়িতেই জন্মেছি, এই বাড়িতেই মরতে চাই।’

জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, ‘এটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিন প্রজন্ম ধরে বসবাসের পর কাউকে এভাবে উচ্ছেদ করা যায় না। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, উদীচির সহসভাপতি অজিত কুমার মণ্ডল, আইনজীবী মাহাবুবুর রহমান, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাবেক সভাপতি বাবুল রবিদাস, কোষাধ্যক্ষ সুধীর তির্কি, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ছোটন সরদার, গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, সিটি করপোরেশনের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সুলতানা আহমেদ সাগরিকা, জুলাই যোদ্ধা ঈষিতা পারভীন ও যুবনেতা উপেন রবিদাস।

মুক্তিযুদ্ধের পর মোল্লাপাড়ায় ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে এখন বাড়ি হয়েছে ১৬টি। এতদিন পর সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি এই ১৬ কাঠা জমির মালিকানা দাবি করছেন। তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে ৩০ লাখ টাকা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার বাড়ি ছেড়েও দিয়েছে। বাকিদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করার আয়োজন চলছিল। তবে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয় এবং প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে।

শুক্রবার সকালে আদিবাসী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মীরা সেখানে মানববন্ধন করেন। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও খোঁজ নেন। লন্ডন থেকে তিনি নেতাকর্মীদের ফোন করে বিকেলে ওই মহল্লায় পাঠান।