রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পশ্চিম ঝিকরা গ্রামের একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির ঘিরে সম্প্রতির অনন্য নিদর্শন বিরাজ করছে। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নতি ঘটছে। পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক অটুট রয়েছে ওই গ্রামে। সেখানে একপাশে যেমন মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন, তেমনি অন্যপাশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা করছেন। একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির থাকলেও তারা ধর্ম পালন করছেন নির্বিঘ্নে। কোন দাঙা হাঙ্গামা হচ্ছে না। সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে এলাকাবাসী।
রাজশাহী চারঘাটের বড়াল নদের পাড়ের পশ্চিম ঝিকরা গ্রামে প্রায় দুই দশক আগে পশ্চিম ঝিকরা কর্মকারপাড়া কালী মন্দির গড়ে তোলা হয়। এখানে শারদীয় দুর্গোৎসবের পাশাপাশি কালীপূজা ও সব ধরনের পূজা-অর্চনা হয়। মন্দিরের পাশেই ২০২১ সালে গড়ে তোলা হয় পশ্চিম ঝিকরা জামে মসজিদ। একই আঙিনায় অবস্থিত মসজিদ ও মন্দির থাকলেও গত পাঁচ বছরে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে কখনো মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব কিংবা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। আজান, নামাজের সময় নীরবতা বজায় রাখেন পূজারি-ভক্তরা। বর্তমান সময়েও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের এই নিদর্শন অটুট রেখেছেন তারা।
মসজিদ কমিটির নেতারা ও মুসল্লিরা বলেন, মন্দিরের পাশেই মসজিদ তৈরি কিংবা যার যার ধর্ম উৎসবের সঙ্গে পালনে কখনও কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। বরং তাদের দাওয়াতে আমরা যাই, আবার আমাদের দাওয়াতে তারা আসেন। দিনশেষে আমরা সবাই এক। ধর্মীয় বিদ্বেষের প্রশ্নই ওঠে না।
পশ্চিম ঝিকরা কর্মকারপাড়া কালী মন্দিরের সভাপতি অপু কর্মকার বলেন, এই মন্দিরে দুই দশকের অধিক সময় ধরে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও কালীপূজাসহ বিভিন্ন পূজা উদযাপন হয়ে আসছে। বর্তমানে পাশে মসজিদ থাকলেও আমাদের কখনো অসুবিধা হয়না। মুসলমানদের সঙ্গে আমাদের কখনো দ্বন্দ্ব হয়নি। আমরা সবাই আনন্দের সাথে যার যার ধর্মীয় উৎসব পালন করছি।
পশ্চিম ঝিকরা জামে মসজিদের মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, আমি যেমন মসজিদের সভাপতি, তেমনি আমার বন্ধু মন্দিরের সভাপতি। আমরা আলাদা ধর্মের হলেও একই আঙিনায় যেমন ধর্ম পালন করি, তেমনই একসাথে আড্ডা দিই, পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানে আমরা একে অপরের অতিথি আমন্ত্রিত হই।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, চলমান হিন্দু ধর্মালম্বীদের দূর্গা পূজার উৎসবকে সুন্দরভাবে উদযাপনের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন, আমরা মনে করি, তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। উৎসব এমন একটা বিষয়, যেটি একা করা যায় না। উৎসব সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। ওই গ্রামে এলাকাবাসী সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সবার নজর কেড়েছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন