ঢাকা রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫

রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা, আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দারা

এম কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম
পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে ঘরের ওপর। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি এখন স্থলভাগে প্রবেশ করে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে রাঙামাটিতে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে, কখনো আবার ভারী বর্ষণে রূপ নিচ্ছে। ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৪০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জেলার ১০টি উপজেলায় ২৬৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে ৩১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরের রিজার্ভবাজারে চেঙ্গিমুখ, চম্পানি মা টিলা, শহিদ আবদুল আলী একাডেমি বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা, পুলিশ সুপার কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা, গর্জনতলী, ভেদভেদী নতুনপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা অন্যতম। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৫ হাজার পরিবারের অন্তত প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে ছোটখাটো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি সেনা জোনের সামনে গাছ উপড়ে পড়ায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় নিচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে। শহরের লোকনাথ মন্দির আশ্রয়কেন্দ্রে এরই মধ্যে ১৮ পরিবারের অন্তত ৬৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে অনেকেই নিজ বাসস্থান ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আছে এমন এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা এবার আগে-ভাগেই দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা কমিটি মিটিং করেছি। জেলা-উপজেলার সবগুলো কমিটিরই মিটিং হয়েছে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বসবাস করে তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এবার আমরা নতুন করে এখানকার এনজিওদের নতুন করে সংযুক্ত করেছি। যাতে সম্ভাব্য কোনো ঝুঁকি তৈরি হলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এরই মধ্যে শহর এলাকাসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করা লোকজনকে আগে-ভাগে নিরাপদে বা জেলা ও উপজেলায় প্রস্তুতকৃত আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করে সার্বক্ষণিক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের রাঙামাটিতে যে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে সেটি ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম পাহাড় ধসের ঘটনা। সে বছর ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের একই সময়ে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড়ধসে ২ শিশুসহ ১১ জন নিহত হন। এর পরবর্তী সময় থেকেই বর্ষা এলে দুই পাহাড়ের পাদদেশ বসাবাস করা স্থানীয় বাসিন্দাসহ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।