রাঙামাটির বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডরমিটরি পর্যন্ত সংযোগ সড়কের ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একই স্থানে একটি পাকা ব্রিজ ও একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও সমস্যা কমার বদলে বেড়েছে।
বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে পাকা ব্রিজটি সম্পূর্ণ ডুবে যায়, আর কাঠের ব্রিজটি অতিরিক্ত ব্যবহার ও আবহাওয়ার প্রভাবে দ্রুত নষ্ট হয়ে পড়ে। প্রতি বছর এই কাঠের ব্রিজ মেরামতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়। ফলে সরকারের বিপুল অর্থ অপচয় হচ্ছে—বলছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় থেকে ডরমিটরি পর্যন্ত প্রায় ৬০ মিটার দীর্ঘ কাঠের ব্রিজটি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নিচের কাঠের খণ্ডগুলোর অনেকগুলো ভেঙে পড়েছে, কিছু স্থানে খুঁটি ও বিম পুরোপুরি নড়বড়ে। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার হচ্ছে, যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী হায়দার বলেন, “প্রতিদিন পাঁচ-সাতশত শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে। গত ঈদুল আজহার পর সর্বশেষ মেরামত করা হলেও এখন প্রায় অনুপযোগী হয়ে গেছে। রিক্সা নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে পথচারীদের।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত সরকারের সময় করা পাকা ব্রিজটি সঠিক উচ্চতা বিবেচনা না করায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। বছরের কয়েক মাস ব্রিজটি ব্যবহার অযোগ্য থাকে। বিকল্প হিসেবে কাঠের ব্রিজ তৈরি করা হলেও তা এক বছরের বেশি টিকে না।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওমর ফারুক বলেন, “কাঠের ব্রিজ হলে প্রতি বছরই মেরামত করতে হয়। ফলে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। শুরু থেকেই পরিকল্পনায় ভুল থাকায় একই জায়গায় দুটি ব্রিজ করেও প্রকৃত সমস্যার সমাধান হয়নি। এখন প্রয়োজন একটি স্থায়ী পাকা ব্রিজ।”
বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, “এই ব্রিজটি বিলাইছড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এটি ব্যবহার করে। ব্রিজের উত্তর পাশের কাঠের খণ্ড ও খুঁটিগুলো ভেঙে যাচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদি ব্রিজটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে শিক্ষার্থীদের দুই মাইল ঘুরে আসতে হবে।”
তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে স্থায়ী পাকা ব্রিজ নির্মাণের দাবিও জানান।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান বলেন, “উপজেলা বরাদ্দ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব নয়; এতে বছরের অর্ধেক বরাদ্দ খরচ হয়ে যাবে। তাই জেলা পরিষদ বা উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। ব্রিজটি নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।”
উপজেলা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন জানান, “ব্রিজটি প্রজেক্টে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ মিটার। প্রতিদিন হাজার মানুষের চলাচল হওয়ায় বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দ্রুত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা চলছে।”
স্থানীয়দের অভিমত—বারবার মেরামত নয়, স্থায়ী ও আধুনিক পাকা ব্রিজই শিক্ষার্থীসহ হাজার মানুষের যাতায়াত নিরাপদ করতে পারে। এখন প্রয়োজন দ্রুত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন