দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে সৌদি আরবের মরিয়ম জাতের খেজুর চাষ করেছেন কৃষক শোকর আলী। এই খেজুর চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
শোকর আলী সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের নরহরকাটি গ্রামের বাসিন্দা।
বর্তমানে তার খেজুর নার্সারিতে ১১ থেকে ১২ হাজার সৌদি মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। খেজুরের গুচ্ছ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ।
অনেকেই গাছ ও ফল দেখে আগ্রহী হয়ে শোকর আলীর কাছ থেকে চারা কিনছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। তার বিক্রি করা খেজুর চারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ খাতে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক খেজুর চাষের স্বপ্ন দেখছেন।
২০১৮ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবের বাহরাইন যান শোকর আলী। সেখানে খেজুর বাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন, খেজুর একটি দীর্ঘমেয়াদি ফল যা কম পরিচর্যায়ও ভালো উৎপাদন দেয়।
২০২১ সালে দেশে ফেরার সময় তিনি সঙ্গে আনেন মরিয়ম জাতের ৫০টি উন্নত খেজুর বীজ। সেই বীজ থেকেই নিজের আঙিনায় শুরু করেন চারা উৎপাদন। পরে তার দুই আত্মীয়ের মাধ্যমে বাহরাইন ও সৌদি আরব থেকে আরও উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে নার্সারিকে সমৃদ্ধ করেন।
শোকর আলীর নার্সারির বেশ কিছু গাছে ইতোমধ্যেই ফল আসায় এটি প্রমাণ করছে যে, এ অঞ্চলের জলবায়ু খেজুর চাষের জন্য উপযোগী।
কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, ‘শোকর আলীর নার্সারিতে উন্নত জাতের গাছে ফল আসতে দেখা গেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। উপকূলীয় মাটি ও জলবায়ু বিবেচনায় পরীক্ষামূলক চাষ সফল হলে, বড় পরিসরে চাষ সম্প্রসারণ সম্ভব।’
এ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আরেক কৃষক শফিউল্লাহও সৌদি খেজুরের বীজ থেকে চিংড়িঘেরের বাঁধে খেজুর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
সাতক্ষীরা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও খেজুর একটি খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল ফসল। তাই ছোট পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন এলাকায় খেজুর চাষ করে উপযোগিতা যাচাই করা যেতে পারে। সফল হলে বড় পরিসরে বাণিজ্যিক চাষের পরিকল্পনা নেওয়া যাবে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও শোকর আলীর প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘প্রবাসে খেজুর বাগানে শ্রম দিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে ফিরে যে সফলতা তিনি অর্জন করেছেন, তা শুধু সাতক্ষীরাই নয়—সারা দেশের কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দেবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিবছর রমজানসহ অন্যান্য সময়ে কয়েক হাজার মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করতে হয়। দেশেই উন্নত জাতের খেজুর উৎপাদন শুরু হলে আমদানিনির্ভরতা হ্রাস পাবে, বাড়বে কৃষকের আয়। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে খেজুর চাষ কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাতে পারে।