ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত কৃষি ও জনজীবন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
সাতক্ষীরায় কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সাতক্ষীরায় কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহর ও গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৮৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এর মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে রোপণ সম্পন্ন হলেও ভারী বর্ষণে অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান, ১৫০ হেক্টর বীজতলা এবং ৫০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজিখেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২-৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধান ও সবজির জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সদর উপজেলার যুগরাজপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এর মধ্যে আট বিঘায় চারা রোপণ শেষ করেছিলাম। এখন সব জমিই তিন-চার ফুট পানির নিচে। খালের মুখ বন্ধ থাকায় পানি বের হতে পারছে না।’

নগরঘাটা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে ঢেঁড়স, বরবটি, পটোল, ওল, মুখীকচু চাষ করেছিলাম। প্রায় তিন লাখ টাকার সবজি এখন পানির নিচে।’

কুমিরা গ্রামের পানচাষি মহাদেব কুন্ডু বলেন, ‘চার বিঘার পান বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। বরজটি নষ্ট হওয়ার পথে।’ 

পটিয়াখালী গ্রামের কৃষক আনন্দ দাশ বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে পটোল ও ওল চাষ করেছিলাম, সবই এখন ডুবে গেছে।’

শহরের রাস্তাঘাটেও পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পানি জমলে ভ্যান নিয়ে বের হতে পারি না। সারাদিন আয় না হলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে।’

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর রোপা আমন, ১৫০ হেক্টর বীজতলা ও ৫০০ হেক্টর সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব নির্ধারণে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’

স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা বলছেন, জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মাছের ঘের তৈরি করে খাল বন্ধ করে দেওয়া, ভেড়ি দিয়ে পানি আটকানো এবং নেট-পাটা বসিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া। 

ফলে স্বাভাবিক নিষ্কাশনব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না। তারা মনে করছেন, সরকারি সহায়তা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।