শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের ছোট্ট আয়মান (১০), প্রতিদিনের মতোই স্কুল ছুটির পর দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিল। ঘর ফেরার আনন্দে ছিল মুখভর্তি হাসি। হঠাৎ করেই সেই হাসি থেমে যায়। একটি বিকট শব্দ, ধোঁয়া, আগুন- তারপরই শুরু হয় ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্ন।
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়মান হাওলাদার। শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শুক্রবার সকালে (২৫ জুলাই) না-ফেরার দেশে চলে যায় সে।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই আয়মান নিজেই এক শিক্ষিকার মোবাইল থেকে ফোন করে জানায় তার পরিবারকে। দগ্ধ শরীর নিয়েও সাহস হারায়নি সে। জানিয়েছিল, স্কুল ছুটির পর দোলনায় দোল খাচ্ছিল। তখন হঠাৎ বিকট শব্দে একটি বিমান এসে স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। পালানোর চেষ্টা করলে উত্তপ্ত ফুয়েল এসে পড়ে তার শরীরে। দগ্ধ হয় পিঠ, হাত ও পা।
খবর পেয়ে ছুটে যান তার বাবা বাপ্পি হাওলাদার। প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও পরে তাকে ভর্তি করা হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। চার দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে আয়মান।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় আয়মানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জুমার নামাজের পর। এরপর সন্ধ্যায় মরদেহ পৌঁছায় তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের বাসুদেবপুর গ্রামে। সেখানে রাত ৯টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার দাদার কবরের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
আয়মানের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। প্রতিবেশী সিনহা জুয়ালিদ রাফি বলেন, ‘আয়মান যখন বাড়িতে আসত আমাকে জড়িয়ে ধরত, খুব মিষ্টি করে কথা বলত। সে ছিল সবার আদরের, ঠিক যেন একটি ফুল। আজ তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না।’
আয়মানের ছোট মামা শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমি জানতে চাই, একজন প্রশিক্ষণরত পাইলট কীভাবে জনবহুল এলাকায় বিমান চালনা করেন? এটা যদি চলতেই থাকে, তাহলে শুধু আয়মান না- ভবিষ্যতে আরও অনেক শিশুর প্রাণ ঝরবে। আমরা চাই, এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটুক।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় একটি নিষ্পাপ প্রাণ হারিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসন নিহত পরিবারের পাশে থাকবে।’
আপনার মতামত লিখুন :