সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মেঘনা ও মেঘনা শাখা নদীতে চলছে ইলিশ শিকার। শিকারের পর সেই মাছ উপজেলার নদীপাড়ের অস্থায়ী আড়তে এনে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও নৌ-পুলিশের অভিযান সত্ত্বেও জেলেরা এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের মেঘনা শাখা নদীর তীরবর্তী ছৈয়ালকান্দির বাইদ্যাপাড়া ও কুচাইপট্রি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পাশের খালের পাড়ে অন্তত তিনটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ট্রলারভর্তি ইলিশ এনে প্রকাশ্যে কেনাবেচা চলছে। খালের মধ্যে নৌকার ওপরই হচ্ছে লেনদেন; পাইকার, আড়তদার ও সাধারণ ক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে অস্থায়ী বাজারগুলো।
স্থানীয়রা জানান, এসব বাজারে মা ইলিশ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কেউ লুকিয়ে, আবার কেউ প্রকাশ্যে মাছ বিক্রি করছেন। গ্রামবাসীরা এক বা দুই হালি করে মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন, আর পাইকারেরা অটোরিকশায় ঝুড়ি ভরে মাছ নিয়ে যাচ্ছেন।
এক ক্রেতা বলেন, সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেনেও পাইকারেরা বেশি দামে মাছ বিক্রি করছেন। তাই আমরা সাধারণ ক্রেতারা সস্তায় ইলিশ কিনতে পারছি না।
গোসাইরহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, প্রতিবছর অক্টোবরের ৪ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নদীতে ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভোলা অঞ্চলসহ মেঘনা ও জয়ন্তী নদীর এই অংশ জাতীয় মৎস্য প্রজনন অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। কর্মকর্তাদের ভাষায়, একটি মা ইলিশ প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ ডিম ছাড়ে; এই সময় সুরক্ষা দিতে পারলে দেশের ইলিশ উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং রপ্তানি সম্ভাবনাও বাড়বে।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, কোদালপুর লঞ্চঘাট, কুচাইপট্রি খেঁজুরতলা ও চরমান্দাইরা-আলাওলপুর পর্যন্ত নদীপথজুড়ে জেলেরা অবাধে মাছ ধরছেন। বড় ট্রলার থেকে শুরু করে ছোট নৌকায়ও চলছে জাল ফেলা। অন্তত ৪০টির বেশি নৌকায় জাল পেতে মাছ শিকার করতে দেখা যায়।
স্থানীয় কয়েকজন তরুণ জেলে জানান, ভরা মৌসুমে মাছ পাইনি। এখন নদীতে নামলেই ১০-১২ হাজার টাকার মাছ পাচ্ছি। ঋণের বোঝা কিছুটা হলেও কমছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোদালপুর মাছঘাটের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিন বলেন, আমি ঘাটের দায়িত্বে নেই। ছৈয়ালপাড়া ও ৬ নম্বর ঘাটে কীভাবে মাছ বিক্রি হচ্ছে, সে বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউসুফ মাল বলতে পারবেন।
চাঁদপুর নৌফাঁড়ির ইনচার্জ ইহছানুল হক বলেন, আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে জাল, ট্রলার ও মাছ জব্দ করি। তবে এলাকা বিশাল, সব জায়গায় একসঙ্গে অভিযান চালানো সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
গোসাইরহাট সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, দিনরাত অভিযান চলছে। তবে একদিকে আমরা অভিযান চালাই, আরেকদিকে জেলেরা সুযোগ বুঝে নদীতে নামে। লোকবল সীমিত হলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।