দেশের সংগীতাঙ্গনে প্রতিনিয়তই আসছে নতুন নতুন মুখ। কেউ কেউ তাদের স্বতঃস্ফূর্ত গায়কী, অদম্য স্বপ্ন আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অল্প সময়েই শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। তেমনই এক সম্ভাবনাময় তরুণী সংগীতশিল্পী সুমাইয়া খানম মনিকা। ইতোমধ্যেই তার গাওয়া গানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং সংগীতপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
মনিকার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার মিরপুরে। ছোটবেলা থেকেই গান তার শিরা-উপশিরায়। আর সেই ভালোবাসাই তাকে টেনে এনেছে মঞ্চে, শ্রোতাদের সামনে। মনিকার সংগীতযাত্রা শুরু বাবার হাত ধরেই। ছোটবেলায় বাবার মুখে গান শুনতে শুনতেই তার মনে জন্ম নেয় সংগীতের প্রতি আগ্রহ। বাবার মাধ্যমেই প্রথম গান শেখা। এরপর স্কুল জীবনে নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। সহপাঠী ও শিক্ষকদের প্রশংসা তাকে আরও উৎসাহিত করে। তিনি বলেন, ‘স্কুলে গান গাইলে সবাই বলতো আমি ভালো গান করি। সেটাই আমার অনুপ্রেরণা হয়ে থেকেছে।’
মনিকার সংগীতপ্রেরণার অন্যতম বড় উৎস বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হায়দার হোসেন। তিনি মনিকার কাছে শুধু একজন শিল্পী নন, বরং কাছের মানুষ যাকে তিনি চাচ্চু বলে সম্বোধন করেন। তাই মনিকার গায়কীতে অনায়াসে ধরা পড়ে হায়দার হোসেনের সুর ও আবেগের ছাপ।
বিভিন্ন ঘরানার গান গাইতে পারলেও মনিকার বিশেষ ঝোঁক আধুনিক গানের দিকে। এখনও নিজের লেখা এবং সুর করা গান না থাকলেও ভবিষ্যতে আধুনিক গানে ভিন্ন মাত্রা আনতে চান তিনি। মনিকার সংগীতযাত্রার আরেক পরিচয় তার ব্যান্ড ‘উইং অব ডাস্ক’। ব্যান্ডটির ভোকাল তিনি নিজেই। গিটারে আছেন জেএস তুহিন, ড্রামে রোজ মহিদ এবং বেজ গিটারে লিফতি। এই দল তাদের স্বপ্ন বুনছে ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রমকে হাতিয়ার করে। ইতোমধ্যে তারা অনেক স্টেজ পারফরম্যান্সে দর্শক-শ্রোতাদের মন মাতিয়েছেন। লাইভ শো বা স্টেজ পারফরম্যান্সের অভিজ্ঞতা মনিকার কাছে খুবই আনন্দের। শ্রোতাদের সামনে দাঁড়িয়ে গান গাইতে পারাটাই তার কাছে সর্বোচ্চ তৃপ্তি। পড়াশোনার পাশাপাশি গানকেও সমান গুরুত্ব দেন তিনি।
মনিকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নারী হয়ে সংগীতে পথচলায় পরিবার কতটা সহযোগিতা করে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি খোলাখুলিভাবে বলেন, ‘আমার পরিবার আমাকে বেশ সহযোগিতা করে। তাদের সহযোগিতাই আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে।’
পরিবারের এমন সহযোগিতায় গান নিয়েই এগিয়ে যেতে চান মনিকা। তবে সংগীতের বাইরে তার আগ্রহ আছে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে। তিনি মনে করেন, সৃজনশীলতার সব পথই একজন শিল্পীকে নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে। তাই ভবিষ্যতে ফ্যাশন ডিজাইন ও আধুনিক গানকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার ইচ্ছে আছে মনিকার। আর তার স্বপ্নের তালিকায় বড় করে লেখা আছে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’। তিনি বিশ্বাস করেন, ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া মানে শিল্পী-জীবনের এক স্বর্ণালী অর্জন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেকে দেখতে চান শ্রোতাদের ভালোবাসা ও সম্মানে ঘেরা একজন জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে।
মনিকা মনে করেন, ধৈর্য আর অধ্যবসায় থাকলে কোনো স্বপ্নই অধরা থাকে না। তাই তো মনিকার বিশ্বাস, সংগীত কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনেরও হাতিয়ার। আনন্দ ও উপভোগের মাধ্যমে মানুষকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যায় গান দিয়ে।
একজন তরুণী শিল্পীর গল্প শুধু গানের নয়, স্বপ্নেরও। সুমাইয়া খানম মনিকা তার কণ্ঠে যেমন ভরসা খুঁজে পান, তেমনি আশা করেন এই কণ্ঠ ছুঁয়ে যাবে কোটি মানুষের মন। সামনে তিনি হোক বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র, তার ভক্ত-অনুরাগীরা সেই প্রত্যাশাই করেন।