আটপাড়া-কেন্দুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোণা-৩ সংসদীয় আসন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। আসনটিতে বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, কর্মীসভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম হিলালি, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা, জিয়া মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোটারিয়ান এম. নাজমুল হাসান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দুলাল এবং ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তৃণমূলের পছন্দ ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতায় রোটারিয়ান এম. নাজমুল হাসান বেশ আলোচনায় রয়েছেন।
জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম হিলালির বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর তার নাম ব্যবহার করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ রয়েছে। কেন্দুয়া ও আটপাড়ায় বিএনপির উপজেলা কমিটি গঠনে নানা অনিয়মের অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আত্মীয়স্বজন ও আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের কারণে ঝাড়ু মিছিল পর্যন্ত হয়েছে। সেই তুলনায় গত ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন রোটারিয়ান এম. নাজমুল হাসান। আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনে ছাত্রদের খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ করেছেন। আন্দোলন ও দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হয়েছেন একাধিক মামলার আসামি। কেন্দুয়া-আটপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৭টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তাকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়েছে।
রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও রয়েছে তার সমান অংশগ্রহণ। নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল-কলেজ। তিনি গোপালপুর মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গড়ে তুলেছেন বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তিনি নাজমুল-আইরিন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গরিব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সহায়তা, দারিদ্র্য দূরীকরণে আর্থিক সহায়তা এবং দুর্যোগকালে ত্রাণ সহায়তা করা হয়। কেন্দুয়া-আটপাড়ার মানুষের বিপদে আপদে সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছেন রোটারিয়ান নাজমুল হাসান। করোনাকালীন সময়ে এই দুই উপজেলার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় কেন্দুয়া-আটপাড়ায় বন্যাদুর্গত ৪ হাজার পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা ও গরিব মানুষের মধ্যে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করেছেন।
কেন্দুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা রোটারিয়ান নাজমুল হাসান রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবেও সফল। তিনি ডাইনামিক গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে গণিতে এমএসসি সম্পন্ন করার পর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
জিয়া পরিবারের প্রতি আস্থাশীল এই রাজনীতিবিদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে তার নির্বাচনী এলাকায় জনমত গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ আমাকে রাজনীতি করতে অনুপ্রাণিত করেছে। পারিবারিকভাবে আমরা জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী। ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করি।’
পরে তেজগাঁও কলেজের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। এভাবেই কয়েক দশক ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। আমি আশা করি বিগত দিনে আমার ত্যাগ দল মূল্যায়ন করবে। বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে ৩১ দফার ভিত্তিতে এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আমি কাজ করব।’
কেন্দুয়া-আটপাড়ার সাধারণ মানুষ মনে করেন, উচ্চশিক্ষিত, সফল ব্যবসায়ী ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ রোটারিয়ান নাজমুল হাসানকে বিএনপি মনোনয়ন দিলে দীর্ঘদিন পর নেত্রকোণা-৩ আসনটি পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে। কারণ তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।