- গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর
- প্রাণ হারিয়েছে ৬৭ হাজার ৭৪ জনেরও অধিক। যাদের মধ্যে শিশু ২০ হাজারের বেশি
- আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৪৩০ জনের বেশি
- ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে গাজায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের। যার মধ্যে শিশু ১৫৪
- হামলা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। শনিবারও ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ২০ জন
- গাজায় শান্তি ফিরবে কি নাÑ এ নিয়ে এখনো রয়েছে নানা প্রশ্ন
- ট্রাম্পের কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চায় হামাস
- গাজায় হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি নাÑ এমন কিছু জানায়নি ইসরায়েল
- হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আলোকে জীবিত ও মৃত সব ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে গোষ্ঠীটি। একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও প্রশাসনিক হস্তান্তর নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহও জানিয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত তারা।
এ ঘোষণার পর ইসরায়েলকে গাজায় হামলা থামানোর নির্দেশ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও গতকাল শনিবার হামাসের ঘোষণার পর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ‘শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ’ অথবা ‘নরকের মুখোমুখি’ হওয়ার জন্য হামাসকে আজ রোববার পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এবং সেখানে শান্তি ফিরবে কি নাÑ এ নিয়ে এখনো রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন। ট্রাম্প হামাসের বিবৃতিকে ইতিবাচকভাবে নিলেও তাদের আলোচনার দাবি নিয়ে এখনো কিছু বলেননি।
এদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপ’ অনুযায়ী গাজায় সামরিক অভিযান সীমিত করা হবে হবে বলে যদিও জানিয়েছে ইসরায়েল, তবে হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এ রকম কিছু বলেনি তারা। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতারা। ইসরায়েল, মিসর ও ভূমধ্যসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত ২৫ মাইল দীর্ঘ ও ১০ কিমি প্রশস্ত এক ছোট্ট ভূখ- গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা শুরু হয়। প্রায় দুই বছরের হত্যাযজ্ঞে ৬৭ হাজার প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে শান্তি ফিরছে বলেই মনে করছেন সবাই।
হামাস গতকাল শনিবার যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, সেখানে ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় পুরোপুরি সম্মতি জানানো হয়নি। তবে যুদ্ধ শেষ করার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও আরব নেতারা যেসব বিষয়কে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছিলেন, সেগুলো মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
যেসব বিষয়ে তারা একমত হয়েছে সেগুলো হলোÑ হামাস তাদের হাতে বন্দি থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। একইসঙ্গে হামাস বলেছে তারা ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামী নেতাদের সমর্থনের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার (যা টেকনোক্র্যাটদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে) কাছে গাজা উপত্যকার প্রশাসন হস্তান্তর করতেও রাজি আছে।
এ ছাড়াও গোষ্ঠীটি তাদের বিবৃতিতে নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করেনি। গাজার শাসনব্যবস্থায় ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না, এ রকম কিছুও তারা বলেনি। তবে ট্রাম্প এই বিষয়গুলোতে রাজি হবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। এদিকে, ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশগ্রহণকারী হামাসের মিত্র ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করেছে।
প্রায় দুই বছর আগের ওই হামলার সময় ইসরায়েল থেকে ধরে নেওয়া ২৫১ জনের মধ্যে, হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত বলেও মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসের বক্তব্যকে ইতিবাচক বলে বর্ণনা করেছেন।
হামাসের এ ঘোষণার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে স্বাগত জানিয়ে তার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন, যাতে জিম্মিদের নিরাপদে ও দ্রুত মুক্ত করা যায়। ট্রাম্পের মতে, চলমান হামলা আর সংঘাতের মধ্যে জিম্মিদের মুক্ত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
হামাসের ঘোষণা ও ট্রাম্পের আহ্বানের পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে ‘গাজা দখল করার জন্য চালানো অভিযান থামানোর’ নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে এবং সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘আর্মি রেডিও’ এ খবর প্রচার করেছে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, ‘যেসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি, সেগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করছি। এটি শুধু গাজা নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রত্যাশিত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।’
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর ওয়াশিংটন সংবাদদাতা বারাক রাভিদ একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান, ট্রাম্পের তাৎক্ষণিক এ প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে অবাক করেছে।
হামাস স্পষ্ট করেছে, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার পুরোটায় তাদের সম্মতি নেই। আংশিক সম্মতি দিয়েছে তারা। গত সপ্তাহ থেকেই হামাস বারবার বলেছে, আরও বেশ কয়েকটি দফা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো গাজাকে সামরিকীকরণ মুক্ত করা।
হামাস কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক আলজাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি দখলদারত্ব পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা (গাজায়) নিরস্ত্রীকরণ করবে না।
এমন বিবৃতি প্রকাশের পর দোহায় হামাসের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ওসামা হামদান আল-আরবি টিভিকে বলেন, উপত্যকায় (গাজা) হামাস বিদেশি শাসন মেনে নেবে না। সেখানকার শাসনভার ফিলিস্তিনিদের দ্বারাই পরিচালিত হতে হবে; এমনকি অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য হলেও।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ২০টি দফা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ গাজা হবে উগ্রপন্থি সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা, যা তার প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হবে না। দ্বিতীয় ধাপে গাজার পুনর্গঠন করা হবে। এই দুই ধাপের বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। ট্রাম্পের তৃতীয় ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও সব শত্রুতা বন্ধের কথা বলা হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষ বন্দি বিনিময়ের জন্য প্রস্তুত হবে। হামাস জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিবে।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে এগিয়ে নিতে আলোচনাকারী দলগুলোকে আলোচনা আবার শুরু করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। হারেৎজ এবং চ্যানেল টুয়েলভের প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদিও আলোচকরা কোথায় ভ্রমণ করবেন তা স্পষ্ট নয়। এর আগে হামাস বিবৃতি দেওয়ার পর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অবিলম্বে বাস্তবায়নে ইসরায়েল প্রস্তুত হচ্ছে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, আইডিএফ প্রধান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে রাতভর বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন নিয়ে আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে গাজায় সামরিক তৎপরতা হ্রাস করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে জানানো হয়েছেÑ সেনারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে যাতে যেকোনো মুহূর্তে হুমকির জবাব দিতে পারে। ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এবং ইসরায়েলের ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ইয়ার গোলান নেতানিয়াহুকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গোলান এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে, আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের চুক্তিকে নষ্ট করার জন্য কাউকে হামাস বা নেতানিয়াহু এবং তার সরকারকেও সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।’
ডেমোক্র্যাট দলের নেতা বলেছেন যে, চুক্তি বাস্তবায়ন, জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের শাসনের অবসান এবং গাজা পুনর্গঠন নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের এগিয়ে যাওয়া এবং সর্বাত্মক লড়াই করা উচিত।
লাপিদ বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রশাসনকে বলেছেন যে, যুদ্ধ শেষ করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে। ‘চুক্তির বিশদ চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আলোচনায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা করা উচিত বলে এক্স-এ লিখেছেন লাপিদ।
এদিকে শান্তি প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার পরও গাজা উপত্যকায় গত ১২ ঘণ্টায় আরও ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার গাজার হাসপাতালের সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবার রাত ১২টা থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ পর্যন্ত গাজা সিটির আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ১১ জনের মরদেহ আনা হয়। এ ছাড়া আল-শিফা, আল-আওদা এবং নাসের হাসপাতালেও মরদেহ আসার খবর পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হওয়া সত্ত্বেও শনিবার সারারাত হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। গত দুই বছর ধরে এ উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি। গাজার দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজার বিভিন্ন ভবনের নিচে এখনো রয়েছে অজস্র মরদেহ।
এদিকে যুদ্ধবিরতিতে হামাস ও ইসরায়েল রাজি হলেও রয়েছে কিছু অনিশ্চয়তা। গত সোমবার হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এগিয়ে গেলে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিভিন্ন রেখা দেখানো হয়েছে। যদি শান্তি পরিকল্পনা হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো সীমানা অনুসরণ করে, তাহলে সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক প্রত্যাহারের পরও গাজার প্রায় ৫৫ শতাংশ ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে থাকবে। দ্বিতীয় প্রত্যাহারের পর গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ দখল ইসরায়েলের হাতে থাকবে। আর প্রত্যাহারের চূড়ান্ত পর্যায়ে, যা একটি নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরি করবে, এরপরও গাজার প্রায় ১৫ শতাংশ দখল করে রাখবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নিজস্ব মানচিত্রের সর্বশেষ সংস্করণে তারা বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র বলে যে এলাকা দেখিয়েছে, তা গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
এদিকে, শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাসের জবাবে যদিও কিছুটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে পরিকল্পনার মূল কয়েকটি বিষয় নিয়ে হামাস তাদের অবস্থান না জানানোয় সংঘাতে এরপর কী হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত নয়।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা অলিভার ম্যাকটার্নান সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘হামাস এখন ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জাামিন নেতানিয়াহুর ওপর দায়িত্ব চাপিয়েছে যে তারা শান্তি পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে আরও আলোচনার জন্য হামাসের আহ্বান মেনে নেবে কি না।’
তিনি বলেন, ‘সহিংসতার জন্য কোন পক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে তার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্প ইসরায়েলকে হত্যা বন্ধ করতে এবং গাজায় সাহায্য পাঠাতে বলার পাশাপাশি আরও আলোচনার অনুমতি দেওয়ার কথা বলবেন।’
গাজায় বিবিসি নিউজের সংবাদদাতা রুশদি আবু আলৌফ বলছেন, গাজার মানুষ হতবাক এবং নাটকীয় ও দ্রুতগতির ঘটনাবলি বুঝতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। গাজার ভেতর থেকে আমি শত শত বার্তা পেয়েছি, যেখানে প্রশ্ন করা হচ্ছেÑ যুদ্ধ কি শেষ হয়ে গেছে? এটি কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব? সেসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে আমি হিমশিম খাচ্ছি। এই সাম্প্রতিক ঘটনাবলি যুদ্ধ থামাতে সফল হবে কি না তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, গাজা যুদ্ধ একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে প্রবেশ করেছে।’
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার কিছু অংশ হামাস গ্রহণ করার বিষয়টি বিশ্বনেতারা ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা অন্যান্য যেসব বিষয়ে সম্মতি আসেনি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘গাজার মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও আলোচনা এবং টেকসই শান্তির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, শান্তি পরিকল্পনার অন্তত কিছু অংশ হামাস গ্রহণ করায় যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা এবং যাদের অত্যন্ত প্রয়োজন তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা সব পক্ষকে বিলম্ব না করে চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে একটি গঠনমূলক এবং উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।’
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার শান্তি এখন নাগালের মধ্যেÑ প্রায় দুই বছর পর, এটি শান্তির সেরা সুযোগ।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘গাজায় সব জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি নাগালের মধ্যে! দেরি না করে হামাসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা উচিত।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘সবার জন্য এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো যা সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তির দিকে পরিচালিত করে। ইতালি তার ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।’
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া উৎসাহজনক এবং এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সব জিম্মিদের মুক্তি এখনই সম্ভব। ইউরোপ যুদ্ধের অবসান এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যা শান্তির একমাত্র কার্যকর সমাধান।