*** মাছ ধরায় শুরু হলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
সারা দেশে শুরু হলো মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশ ও ছোট (জাটকা) ইলিশ মাছ রক্ষায় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পিরোজপুরের জেলে শ্রমিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা। বিকেলে শেষ মুহূর্তে মৎস্য কেন্দ্র ও ছোট বাজারগুলোয় ইলিশ মাছের দাম চড়া হলেও সকালে বাজারে কিছুটা দাম কম দেখা গিয়েছে। মৎস্য কেন্দ্র ও বাজারগুলোয় মিলছে না বড় ইলিশ। বিন্দি জাল, বাঁধা জাল, নেট জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মারা হচ্ছে জাটকা ইলিশ। জলদস্যুদের কারণে মাছ শিকার করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা।
সরেজমিনে জেলার ইন্দুরকানী বাজার ও পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ ছোট কয়েকটি মাছ বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক শুক্রবারের সকালের এ বাজারে বেশকিছু মাছ ব্যবসায়ী ছোট ও মাঝারি ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে বসেছে। এখানকার ছোট ইলিশের দাম ৪৫০-৫০০ টাকা ও মাজারি ইলিশের দাম ৭০০-৭৫০ টাকা। তবে বিকেলে মৎস্য কেন্দ্র ও ছোট বাজারগুলোয় দেখা গিয়েছে ছোট ইলিশ ৫৫০-৬০০ টাকা ও মাজারি ইলিশ ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে এ মৎস্য কেন্দ্রটিতে ১০-১২টি ফিশিং বোর্ড নোঙর করেছে।
জাকির হোসেন ও জহিরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে শ্রমিক বলেন, ‘আমরা একটি বোর্ডে ১২-১৪ জন সমুদ্রে মাছ ধরতে যাই। টাকা ধার করে পরিবারে বাজার করে দিয়ে যেতে হয়েছে, তবে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা সে পরিমাণ পাইনি। সাগরে যেতে এক ট্রিপে আমাদের খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। অথচ আমরা মাছ পাই ৬০-৮০ হাজার টাকার, মাঝেমধ্যে এর থেকে বেশি পাই। এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মাছ কম পাওয়ার কারণ হচ্ছে, ডিম ছাড়ার সময় মা ইলিশ এবং ছোট জাটকা ইলিশ কিছু অসাধু জেলেরা শিকার করে। কোর্স গার্ডসহ যেসব বাহিনী আছে তারা টাকার বিনিময়ে বিক্রি না হলে আমরা বেশি করে মাছ পাবো, তখন আমাদের ধার করে চলতে হবে না। বিদেশে মাছ পানি সমন, অথচ এ দেশে নদী খাল বেশি হলেও তেমন মাছ নেই।’
একাধিক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ‘মাছ খুবই কম তবে দাম বেশি। সাগরে জাটকা এবং মা ইলিশ ডিম ছাড়ার আগেই অবৈধভাবে কিছু জেলে ধরার কারণে মাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ জন্যই নদী ও সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মাছ যদি সাগরে হয় তাহলে আমরা খেতে পারব, না হলে তো পাব না। আসলে আমাদের কপাল আমরাই পোড়াচ্ছি।’
মাছ ক্রেতা ইন্দুরকানী ভূমি অফিসের হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অবরোধের আগের দিন হওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মাছ কিনতে এসেছে। এ জন্য মাছের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া মাছ কিছুটা কম উঠেছে। আসলে বিভিন্ন সময় দেখতে পাই, অবরোধের মধ্যে অসাধু জেলেরা মা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। এ জন্য ইলিশ রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সরকারকেও কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
পাড়েরহাট ও বাদুরা মৎস্য সমিতির সহসভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘মাছ কম পাওয়ার কারণ হলো মা ইলিশ ডিম ছাড়ে মেঘনা নদীতে। ওই জাটকা ইলিশগুলো নদী এবং সাগরে আসার সময় কিছু অসাধু জেলে বিন্দি জাল, বাঁধা জাল, নেট জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছগুলো ধরে ফেলে। এ ছাড়া কাঠের টলিংগুলো জাটকা ও পোনা ইলিশসহ সব মাছ মেরে ফেলছে। ছোট নদী থেকেও একই উপায়ে মাছ মেরে ফেলছে, যারা এসব কাজ করে তারাই সরকারের চাল-ডালসহ সব সুবিধা ভোগ করতেছে। এসব কারণেই আমাদের জেলেরা মাছ খুবই কম পাচ্ছে এবং তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া সুন্দরবনের জলদস্যুরা জেলেদের আটকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে, সম্প্রতি এখানকার ৩ জন জেলেকে আটকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে। আমাদের দাবি হলো এই অবৈধ জালগুলো এবং জলদস্যু নির্মূল করতে হবে।’
ইন্দুরকানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ রহমান বলেন, ‘আমাদের সরকারের নীতি অনুসারে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষা অভিযান ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়টায় যেসব ইলিশ আমাদের নদীতে ডিম ছাড়তে আসে এ জন্য মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ সরকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব। এ সময়টায় জেলেদের ভিজিএফের মাধ্যমে চাল দেওয়া হবে। গত বছরের যে প্রশাসনিক ঘাটতি দেখা গিয়েছিল, সে কারণে জেলেরা অসৎ উপায়ে মাছ শিকার করেছেন, এ কারণেই হয়তো এবার মাছের বড় একটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কোনো জেলে যদি অসৎ উপায়ে মাছ শিকার করে তাহলে তার জেলে কার্ড বাতিল করা হবে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।