সরকারি হস্তক্ষেপ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন থেকে তামিম ইকবালসহ ১৬ প্রার্থী সরে দাঁড়ান। এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন আরও দুই প্রার্থী। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বিসিবি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল। নির্বাচনে কারচুপির শঙ্কায় এবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আরেক প্রার্থী হাসিবুল আলম। রাজশাহী বিভাগ থেকে পরিচালক পদের লড়াইয়ে ছিলেন তিনি। গতকাল বিসিবি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা সংগঠকেরা। এই তিন দাবি না মানলে বিসিবির পরবর্তী ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কার্যালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিসিবি নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা ক্রীড়া সংগঠকেরা। এ সময় নিজেদের দাবি ও এর যৌক্তিকতা উত্থাপন করেন মোহামেডানের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিসিবি নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিতর্কিত করছে। ৬ অক্টোবর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজন করলে ইতিহাস কলঙ্কিত হবে। চলমান এই সমস্যা সমাধানে তিন দফা দাবি জানান তারা। সংগঠকদের দাবিগুলো হচ্ছেÑ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের সময় বাড়ানো (পেছানো), অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন কিংবা নতুন গঠিত কমিশনের মাধ্যমে পুনরায় তপশিল ঘোষণার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সব দাবি তোলা হলে সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। বিসিবি নির্বাচন ঘিরে সংগঠকদের অভিযোগÑ জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলর তালিকায় সরকারি হস্তক্ষেপ, আবাহনী-মোহামেডানের মতো বড় ক্লাবের কাউন্সিলরদের নির্বাচন বর্জন, বিসিবি সভাপতির ‘একক হস্তক্ষেপে’ কাউন্সিলরদের যোগ্যতার ক্যাটাগরি নির্ধারণ, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সাবেক বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ, ১৫ ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ না দেওয়া এবং জেলা-বিভাগীয় কাউন্সিলরদের ‘আটকে রাখা’। এ ছাড়াও ৫ অক্টোবরের মধ্যে এসব দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। অন্যথায় বৃহত্তর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি আসন্ন ঘরোয়া ক্রিকেটেও অংশ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে, গতকাল বিসিবিতে এসে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হাসিবুল। আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রত্যাহারের সুযোগ অবশ্য গত বুধবারই পেরিয়ে গেছে। ব্যালট পেপারে তাই হাসিবুলের নাম থাকবেই। তবে তার অংশগ্রহণ আর থাকছে না। হাসিবুলের অভিযোগ, শুরু থেকেই তাকে ভোটারদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। ফলে সুষ্ঠু ভোটের কোনো পরিবেশ নেই বলে মনে করছেন তিনি। হাসিবুল বলেন, ‘গত ২ অক্টোবর আমি নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি দিয়েছি। আমার ভোটারদের খুঁজে পাচ্ছি না, ভোট চাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। আমি মনে করি, মুখলেছুর রহমানের (এই ক্যাটেগরির আরেক প্রার্থী) মনোনয়নপত্র বাতিল করা উচিত।
তিনি যেভাবে ভোট করছেন, তা পুরোপুরি অবৈধ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব কাউন্সিলর প্রলোভনে পা দিয়েছেন, তাদের কাউন্সিলরশিপও বাতিল করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে বিসিবি নির্বাচনের মান আরও খারাপ হবে। আগের নির্বাচনের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি এখন চোখে পড়ছে। সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না, বরং এটা প্রহসনের নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি মনে করছি, এই প্রক্রিয়ায় ভালো কোনো ফল আসবে না। ফলে আমি স্বেচ্ছায় নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালাম। আর অংশগ্রহণ করব না।’
হাসিবুল সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুহাম্মদ মুখলেছুর রহমান (শামীম) রাজশাহীর ভোটারদের ঢাকায় একটি হোটেলে গোপনে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে একটি বিদেশি নাম্বার থেকে ফোন দেওয়া হলো। জানানো হলো, রাজশাহীর কাউন্সিলররা ঢাকার ইউনিক রিজেন্সি হোটেলে আছেন। বলা হলো, তারা ৮টি রুমে আছেন। এমনকি প্রার্থীসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা ৬০৩ নম্বর রুমে আছেন বলেও জানানো হয় আমি নিজে যাইনি, একজন প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিলাম। যাওয়ামাত্রই ওখানকার কাউন্টারে নিশ্চিত করা হলো যে ওই প্রার্থী সেখানেই উঠেছেন।’