বছরের শুরুতেই নতুন বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয় শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে নতুন ক্লাসের নতুন বই পড়তে আগ্রহের শেষ থাকে না শিক্ষার্থীদের। কিন্তু হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ের মুখ আজও দেখেনি শিক্ষার্থীরা। বছরের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও বই হাতে পায়নি তারা। এতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও জেলার সচেতন মহল।
সোমবার (২০ অক্টোবর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা। সেখানে বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত বাংলা পাঠ্যবই পায়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা বাংলা বই ছাড়াই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। সেখানে নতুন বই না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাংলা বই সম্পর্কে তেমন ধারণাও নিতে পারেনি।
বিষয়টি শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে একদিকে যেমন পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এ ঘটনার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস একে অপরকে দোষারোপ করছে।
সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘স্যার-ম্যাডামকে অনেকবার বলেছি বাংলা বই দেওয়ার জন্য, কিন্তু উনারা আমাদের কথা শুনেন না। বাংলা বই ছাড়া অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছি। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, এখনো বই পাইনি তাই দুশ্চিন্তায় আছি।’
বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চন্দ্র শেখর সরকার বলেন, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পায়নি সেটা সত্যি দুঃখজনক। তবে তারা বাংলা বই ছাড়া সব বই পেয়েছে। আমরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই লাগবে বলে জানালে তারা বইটি আমাদের দেয়নি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বছরের শুরুতেই জেলার সব উপজেলায় শিক্ষার্থীদের বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলার এত কাছে থেকে বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বই পাবে না সেটা হতে পারে না। ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বইয়ের প্রয়োজন কিংবা চাহিদা আছে, সেটা আমাদের জানায়নি। তারা এখন যে কথাগুলো বলছে সেগুলো দায়সারা। শিক্ষার্থীদের বই প্রয়োজন হলে আমরা ম্যানেজ করে কিংবা ফটোকপি করে ছাপিয়ে দিতাম।
সুনামগঞ্জ জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি সনাকের সহ-সভাপতি খলিল রহমান বলেন, সামনে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা, অথচ বাংলা বই এখনো শিক্ষার্থীরা পায়নি। এর দায়ভার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা শিক্ষা অফিসের অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পাঠ্যবই ছাপা ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কোনো কারণ নেই। মার্চ মাসের মধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব বই বিতরণ শেষ হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি বিষয়ের বই না গিয়ে থাকে, তাহলে দায়ভার সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব প্রকৃত ঘটনা কী এবং এতে দায় কার।