ওয়াসিম বেরেলভি খ্যাতিমান উর্দু কবি। উর্দু সাহিত্যে তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত। সাবলীল ভাষা, মধুর ছন্দ ও গভীর ভাবসম্পন্ন উপমার জন্য পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন তার।
ওয়াসিম বেরেলভির জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেরেলিতে। জন্মস্থানের নাম থেকেই তিনি বেরেলভি উপাধি গ্রহণ করেছেন। ১৯৪০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম হয়। তিনি একাধারে কবি, অধ্যাপক ও সাহিত্যিক। এ ছাড়া তিনি আধুনিক উর্দু গজলের জন্য জনপ্রিয়।
ওয়াসিম বেরেলভির শেরগুচ্ছ ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন জুবায়ের দুখু।
এক
তোমাকে পেতে আমি এত কিছু হারিয়েছি—
যদি মিলনও হয়, তবে সে মিলনেরও দুঃখ হবে।
দুই
যেখানেই থাকো তুমি, আলো ছড়াবে নিশ্চয়
প্রদীপের কোনো নিজস্ব ঠিকানা হয় না...
তিন
বড় যত্নের সঙ্গে তুমি মিথ্যে বলেছিলে
বিশ্বাস না করে আর কী করার ছিল বলো?
চার
রাত তো সময়ের পথ, সে তো চলে যাবেই,
দেখতে হবে— প্রদীপগুলোর পথ কত দূর!
পাঁচ
কোনো ঝড়ও টলাতে পারে না সহজে
অথচ এক ফোঁটা জল ভাসিয়ে নিতে পারে আমায়।
ছয়
সকাল বেলার চোখে সন্ধ্যা নামতে থাকে,
এত আপসে বাঁচি তবু মরতে হয় শেষে।
সাত
ভালোবাসায় বিচ্ছেদের কৌশল সবার আসে না,
কাউকে ছাড়তে হলে, দেখা করো বেশি—
আট
জীবনে বারবার দুঃখ, এই অভিযোগ আমার
এরা তো চোখের জল ফেলারও অবকাশ দেয় না।
নয়
তোমাকে লিখছি অশ্রুজলে
এই ভাষা তুমি ছাড়া কে আর বোঝে?
দশ
সম্পর্কে এমন কোনো ভ্রমের খেলা রেখো না
তোমার হওয়াও সত্যি, আবার না হওয়াও!
এগারো
আমার ঘরের ঠিকানা জেনে আর কী হবে?
তোমার পায়ে তো অন্য মানচিত্র এঁকে ফেলেছ।
বারো
আমি তো চেয়েছি তোমাকে সাধারণ মানুষের মতো,
তুমি আমার স্বপ্ন নও যে ভেঙে যাবে।
তেরো
ক্লান্ত পাখিরা যখন নীড়ে ফেরে,
যত্নশীল ডালপালার নমনীয়তা তোমার শেখা জরুরি।
চৌদ্দ
যে দিনগুলোতে তোমার কথা ভাবি
ঠিক সেই দিনগুলোতেই যেন দুনিয়াকে বুঝি।
পনেরো
বহু বছর ধরে যা বয়ে চলেছে আমার আর তোমার মাঝে,
হয়তো এই দূরত্বের নামই জীবন।
ষোলো
কী দুঃখের সাগরে আছে, বলতেও পারে না সে,
অশ্রুর মতো চোখে এসেও ঝরতে পারে না।
সতেরো
তোমার খেয়ালের হাতে এমনভাবে ছড়িয়েছি
গোছাতে গিয়ে দেখি— অনেককিছু হারিয়েছি।
আঠারো
একা মানুষেরও নাকি ঘরে ফেরার নেশা আছে, কে জানে
শারাবখানায় রাত কাটানো মানুষটি কি বুঝবে?
উনিশ
আমার একাকিত্ব আমায় এমন জায়গায় দাঁড় করিয়েছে,
আজকাল আমায় কেউ ভুলও বোঝে না।
বিশ
যারা সব মুখের সমালোচনা করে বেড়ায়,
তারা কি রোজ আয়না দেখে?