বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম

পুঁজিবাজারের পুঁজি শেষ

রহিম শেখ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম

পুঁজিবাজারের পুঁজি শেষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর গড়ে ছয় শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে দেখা গেছে ঠিক তার উল্টো চিত্র। প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, পুঁজিবাজারের পুঁজিই শেষ হয়ে গেছে। সহজ করে বললে, শেয়ারবাজার ছিল আকর্ষণহীন; যেখানে মন্দা থেকে আরও মন্দায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ২০১০ সালের পরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকেই পুঁজি হারিয়ে শেষ পর্যন্ত শেয়ার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আস্থার সংকটে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ছেড়েছেন বাজার। মূলত শেয়ারের সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের নামে কারসাজি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এতে ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শেয়ার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে।

এসব কারসাজিতে জরিমানা ছিল ‘নামমাত্র’। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রক্ষার কথা বলে অসংখ্য নীতি, বিধিবিধান প্রণয়ন ও আদেশ জারি করেছে। তবে বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের চোখের সামনেই সূচক কমেছে সাড়ে তিন হাজার পয়েন্টেরও বেশি। তারপরও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও এম খায়রুল হোসেনের অযাচিত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ১২৭ প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি অনুমোদন করেছে। এর মাধ্যমে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাবলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু, এরা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মুনাফা করার সক্ষমতা কমেছে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে,
২০১০ সালে রেমিট্যান্স ছিল ১১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা পৌঁছায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর গড়ে ছয় শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজার এই প্রবৃদ্ধির মধ্যে নিজেকে মেলে ব্যর্থ হয়েছে। গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সংখ্যা ১৪ থেকে বেড়ে ৬৭, মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ১৮ থেকে বেড়ে ৬৬ হয়েছে। একইভাবে, স্টক ব্রোকারেজ ফার্মের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০২, যা ২০১০ সালে ছিল ৩৭০টি।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্টক ব্রোকারেজ ফার্মের সংখ্যা বাড়লেও বেনিফিশিয়ারি ওনার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৪ লাখ থেকে ১৬ লাখে নেমে এসেছে। ২০১০ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গড় লেনদেন ছিল এক হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এটি ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। পরে ২০২১ সালে গড় লেনদেন হয় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এই দুটি বছর ছাড়া আর কখনোই লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার গণ্ডি পার হয়নি। ২০২৩ সালে গড় লেনদেন ছিল ৫৭৮ কোটি টাকা। ২০১০ সালে ডিএসইর তৎকালীন প্রধান সূচক ডিএসই জেনারেল ইনডেক্স (ডিজিইএন) বেড়ে হয়েছিল আট হাজার ৯১৮ পয়েন্ট। পরে তা কমতে শুরু করে। ২০১৩ সালে ডিএসই সূচক চালুর পর ২০২১ সালে তা সাত হাজার ৩০০ পয়েন্টের বেশি হয়। মাত্র কয়েকদিন সূচক সাত হাজার পয়েন্টের ওপরে ছিল। বর্তমানে সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের আশপাশে।

নীতি গ্রহণের পরেও ছিল আস্থার সংকট

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রক্ষার কথা বলে গত ১৫ বছরে অসংখ্য নীতি, বিধিবিধান প্রণয়ন ও আদেশ জারি করেছে। তবে বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আস্থার সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজার। এসব পরিবর্তন পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও এম খায়রুল হোসেনের অযাচিত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস আরোপ, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো ও শেয়ারের লভ্যাংশকে তাদের রিটার্ন হিসাবে অনুমোদন দেওয়া এবং দুর্বল পারফরম্যান্স রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাথমিক পাবলিক অফারিং করার অনুমতি দেওয়াসহ ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নে কঠোর শর্ত আরোপ এবং শেয়ারের দাম একদিনে কতটুকু বাড়তে বা কমতে পারে তা নির্ধারণে সার্কিট ব্রেকারে ঘন ঘন পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটিও হিতে বিপরীত হয়েছে। খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১১ ও ২০১২ সালে জোর করে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

করোনা মহামারির সময় ব্যাংকিং কার্যক্রম অল্পদিন পর চালু হলেও পুঁজিবাজার প্রায় দুই 

মাস বন্ধ ছিল। পৃথিবীর আর কোনো পুঁজিবাজার এত দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা হয়নি। নিয়ন্ত্রক 

সংস্থার দিক থেকে এটি বাজে সিদ্ধান্ত ছিল। এরপর, ফ্লোর প্রাইস দুইবার আরোপ করা হয়।

 এটি ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত হিসাবে প্রমাণিত হয়। তার মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা শেয়ারের দাম 

নির্ধারণ করতে পারে না। শেয়ারের নিচের দিকের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় ক্রেতার 

সংখ্যা কমে যায়। বাজারে তারল্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়।

ইনভেস্টিট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ এমরান হাসান

সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের কারসাজি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা

গত ১৫ বছর যেভাবে পুঁজিবাজার পরিচালিত হয়েছে একে শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি হয়েছে দিনেদুপুরে। শেয়ারের সিরিয়াল ট্রেডিংসহ এ ধরনের কারসাজি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এতে ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে নিরাপদ মিউচুয়াল ফান্ডও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কারণ বেশ কয়েকটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নজিরবিহীনভাবে মিউচুয়ার ফান্ডের টাকার অপব্যবহার করেছে। যদিও তারা এসব বিনিয়োগ সুরক্ষা ও ভালোভাবে পরিচালনার জন্যই নিযুক্ত হয়েছিল। ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর তদন্ত চলেছিল চার মাস। জড়িতরা পালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চার ব্রোকারেজ হাউসÑ বানকো সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ ও শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। অন্তত ৬৮ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে গ্রাহকদের প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে।

বড় অপরাধেও জরিমানা ছিল ‘নামমাত্র’ 

বেশ কয়েকটি শেয়ারের মূল্য কারসাজি করায় ২০২২ সালে বিএসইসি মাত্র ২১ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল। যেখানে শেয়ার জালিয়াতকারীরা ২৫৩ কোটি টাকা হাতিয়েছিল। ২০২৩ সালে শেয়ারের দাম কারচুপির দায়ে দুই কোটি টাকা জরিমানা হলেও কারচুপিকারীদের মুনাফা হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা। গত ১৫ বছর ধরে একই পরিস্থিতি দেখা যায়। শেয়ারের কারসাজিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে। তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ছিল অশনিসংকেত। জবাবদিহিতার অভাব থাকায় ও বিএসইসি কারসাজিকারীদের জরিমানা হিসেবে নগণ্য পরিমাণ অর্থ আরোপ করায় পুঁজিবাজারে কারসাজি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। এমনও দেখা গেছে, দুর্বল অনেক প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।

আইপিও অনুমোদন পুঁজিবাজারে ‘বোঝা’ তৈরি করেছে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ১৫ বছরে ১২৭ প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছে মাত্র ৫২টি, বি’ ক্যাটাগরিতে ৪৩টি। এ ছাড়াও, ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাবলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু, এরা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মুনাফা করার সক্ষমতা কমেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গত ১৫ বছরে আইপিও অনুমোদন পাওয়ার সুবিধার্থে এসব প্রতিষ্ঠান অনেক সময় অনেক সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের অন্যায্য সুবিধা দিয়েছে। এ ধরনের কাজ নতুন তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিদেশি বিনিয়োগ রেকর্ড পরিমাণে কমেছে 

২০২০ সাল থেকেই বিদেশিরা তাদের শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। কারণ তখন থেকেই তারা ভাবছিলেন, বাংলাদশের টাকার দাম ডলারের বিপরীতে অনেক কমতে পারে। বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ দেখে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মৌখিক নির্দেশনা দেওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগের তথ্য তখন থেকে দেওয়া বন্ধ করে দেয়। অতীতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেক আকস্মিক সরকারি নীতি পরিবর্তনের মুখে পড়তে হয়েছিল। এটি তাদের বিনিয়োগকে প্রভাবিত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০২২ সালের জুনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনকে সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।

ছয় মাস পর তা তুলে নেওয়া হলেও এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমে যায় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিএসই) সভাপতি ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিদেশিদের হাতে থাকা বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির মূল কারণ টাকার মান কমে যাওয়া ও ফ্লোর প্রাইস আরোপ। টাকার দাম কমে গেলে শেয়ারের দাম না কমলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লোকসানে পড়েন। তারা যখন টাকার অবমূল্যায়নের আশঙ্কা করেন তখনই শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। এ ছাড়াও, দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ২ মাসে পুঁজিবাজার থেকে ২৯ হাজার কোটি টাকা উধাও

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে দরপতন থেকে বেরই হতে পারছে না পুঁজিবাজার। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউনূস সরকারের অধীনে প্রথম কর্মদিবস ১১ আগস্ট। তার আগের কর্মদিবস ৮ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, যা গত বৃহস্পতিবারে ঠেকেছে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪১ কোটি ৫৭ হাজার টাকায়। অর্থাৎ, এই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ২৯ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চলমান এই দরপতনকে পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার প্রতিফলন বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। আর অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সরকার বা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার উদ্যোগের কারণে বেকায়দায় পড়ছে কারসাজিকারী এবং সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। তাই সাজা থেকে বাঁচতে পুঁজিবাজারে পতনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তাঁরা। এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত দুই-তিন বছরে ফ্লোর প্রাইস এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারকে ধরে রাখা হয়েছে। বাজার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। এ ছাড়া শুধু রোড শো করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায়নি।

আরবি/জেআই

Link copied!