পঞ্চমবারের মতো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) সাসটেইনেবল রেটিং-২০২৪ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে পাঁচ সূচকে উত্তীর্ণ হওয়া ১০টি ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। এ তালিকায় স্থান পাওয়া সব প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি খাতের। এবার সরকারি মালিকানার কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় স্থান পায়নি। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের অংশ হিসেবে ২০২০ সাল থেকে সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০২৪ সালের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে গতকাল বুধবার সাসটেইনেবল রেটিং পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ও শাহজালাল ব্যাংক। এর মধ্যে ডাচ-বাংলা, এনসিসি, পূবালী ও শাহজালাল ব্যাংক নতুন করে স্থান পেয়েছে। বাকি ছয়টি ব্যাংক ২০২৩ সালের রেটিংয়েও স্থান পেয়েছিল।
এবারের রেটিংয়ে স্থান পাওয়া দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স। ২০২৩ সালে তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছিল। এবার ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড বাদ পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কোনো স্বীকৃতি একটি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। ফলে এ ধরনের রেটিং একটি ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
শীর্ষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয় মূলত পাঁচটি উপাদানের প্রায় দেড়শ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। পাঁচটি মূল উপাদানের মধ্যে রয়েছেÑ টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে অবদান, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, কোর ব্যাংকিংয়ের টেকসইতা এবং সেবার পরিধি। এর আওতায় একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধনের পর্যাপ্ততা, তারল্য পরিস্থিতি, ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয় চলে আসে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্যও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টেকসই ও সবুজ অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতেই ভালো রেটিং পাওয়া প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, রেটিং দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি মূল উপাদানের মধ্যে টেকসই অর্থায়ন বলতে কার্বন নিঃসারণ হ্রাসের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় কমানোর পাশাপাশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন খাতে বিনিয়োগকে বোঝানো হয়। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ব্যাংকগুলোর অবদান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির আওতায় ঋণ বিতরণ বিবেচনায় নেওয়া হয়। কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটিও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, এ ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের ক্যামেলস তথা মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণের গুণগত মান, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, আয়, তারল্য পরিস্থিতি এবং সংবেদনশীলতার বিষয়টি দেখা হয়। আবার ব্যাংকটির একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করেছে কি না, পরিচালকদের হস্তক্ষেপ, খেলাপি ঋণ কতটাÑ এসব বিষয় যাচাই করা হয়। আরেকটি বিষয় হলো ব্যাংকের সেবার পরিধি। এ ক্ষেত্রে শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, এটিএম বুথসহ বিভিন্ন স্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ কাজে কাগজের ব্যবহার কমানো, সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো ইত্যাদিও গুরুত্ব পায়।
আপনার মতামত লিখুন :