রিংশাইন টেক্সটাইলের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট এবং আইপিও জালিয়াতির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আব্দুল কাদের ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়, যা গতকাল সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিএসইসি আরও জানিয়েছে, আব্দুল কাদের ফারুকসহ এ ঘটনায় জড়িত মোট ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারিরও ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। বাকিরা হলেন– রিংশাইন টেক্সটাইলের ৯ বিদেশি মালিক, ভারতীয় নাগরিক অশোক কুমার চিরিমার এবং আইপিও প্রসপেক্টাসে কোম্পানি সচিব এবং সিএফও হিসেবে স্বাক্ষর করা দুই ব্যক্তি। তাদের সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে দুদককে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
আব্দুল কাদের ফারুক হলেন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শার্প ইন্ডাস্ট্রিজের (একীভূত ও নাম বদল হওয়া সাবেক আরএন স্পিনিং) এবং ফার কেমিক্যাল নামক দুই কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা। ২০১২ সালে আরএন স্পিনিং রাইট শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রমাণের পরও ড. এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএসইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ২০১৯ সালে আইপিও প্রক্রিয়ায় দেড়শ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত হয় রিংশাইন।
আগের চার বছরে জালিয়াতি করে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা মূলধন বাড়ানো হলেও একটি টাকাও কোম্পানির হিসাবে জমা হয়নি। এর মূল হোতা ছিলেন ফারুক।
ঢাকা ইপিজেডের কোম্পানিটির বিদেশি মালিক ও ফারুক সাড়ে ২৭ কোটি শেয়ারের পুরোটা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। পরে ফারুক নিজের অংশ নিকটাত্মীয়, স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে হস্তান্তর করেন। কিছু অংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার আকারে বিক্রিও করেন। আর্থিক প্রতিবেদনে কর অংশের জালিয়াতির জন্য তৎকালীন এনবিআর কমিশনার মতিউর রহমানসহ (ছাগলকাণ্ডের মতিউর) কয়েকজনকে ঘুষ আকারে ওই জালিয়াতির শেয়ার দিয়েছিলেন।
রিংশাইন টেক্সটাইলের মূলধনসহ অসত্য ও অতিরঞ্জিত আর্থিক প্রতিবেদনকে সঠিক বলে প্রত্যয়ন করায় ইস্যু ম্যানেজার এএফসি ক্যাপিটাল এবং সিএপিএম অ্যাডভাইজরির নামে উভয় মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও যথাক্রমে মাহবুব এইচ মজুমদার এবং তানিয়া শারমিনকে শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া উভয় প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাশাপাশি ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত হিসাব বছরে রিংশাইন টেক্সটাইলের মিথ্যা ও বানোয়াট আর্থিক বিবরণী অনুমোদনের অভিযোগে চারটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আখতার, শিরাজ খান বসাক, মাহফেল হক এবং এটিএ খানের পার্টনারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) অভিযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইপিও-পূর্ব প্রাইভেট প্লেসমেন্ট আকারে মাত্র ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনকে ২৮৫ কোটি ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করার ঘটনায় ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে কোনোরূপ শাস্তি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএসইসি। এমনকি এ ঘটনায় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, বিএসইসির তৎকালীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, জালিয়াতির মূল হোতা হিসেবে আব্দুল কাদের ফারুকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদককে ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া রিংশাইন টেক্সটাইলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাং ওয়েই মিন, চেয়ারম্যান সাং জাই মিন, পরিচালক হ্যাং সিউ, হসিয়াও হাই হে, সাং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা, সাং চাং ইয়াও, শিও ইয়েন শিন, হসিয়াও লিউ ই চি এবং চাক কওয়ানের বিরুদ্ধেও একই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইসিবি ক্যাপিটালের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সম্ভবত তদন্তে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :