একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের যে কেন প্রান্তেই হোক না কেন, তার কাজ হচ্ছে জ্ঞান প্রজ্বলন করা, জ্ঞান সৃষ্টি করা, মানবতার উন্নয়ন ঘটিয়ে উচ্চ স্তরের সমাজ গড়ে তোলা। আর সে জ্ঞানের আলো যাদের মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু, ইদানিং কিছু বিশ্ববিদ্যালের দিকে তাকালে যে চিত্র চোখে পড়ে তা ভয়াবহ এবং হতবাক হতে হয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে দফায় দফায় পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের। যা নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
এরইমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, ঢাবি ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দ্বারা ইডেন মহিলা কলেজের ২০২০-২১ সেশনের এক নারী শিক্ষার্থী ইতি জান্নাতের (ছদ্মনাম) হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তোভোগী শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক সকাল ১০ টায় ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানান। ঢাবির যে দুজন শিক্ষার্থী পরিচয়ে দিয়ে মেয়েকে হেনস্ত করে তাদের একজনের গায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লগো সম্বলিত টিশার্ট পরা ছিল। তারা এক পর্যায়ে মেয়েটির নেকাপ খোলার জন্য জোরাজুরি করে।
ইতি জান্নাতের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলোঃ
‘আমার আম্মুকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পিজিতে রেখে আমি পরিক্ষা দিতে আসি।
পরীক্ষা শেষ করে আনুমানিক দুপুর ১ টার সময় পিজি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অনেক খোজা খুজির পরও রিক্সা রাজি করতে পারি না। সেদিন বিএনপির কোন একটি রাজনৈতিক প্রগাম ছিল জেনেছি ।
তো আমি ভিসি চত্ত্বর পর্যন্ত যাই। আম্মু এদিকে অনেক বার কল করায় আমি ভেবেছিলাম ঢাবির হল পাড়া হয়ে বঙ্গবন্ধু হলের পিছনের গেট দিয়ে বের হবো। মল চত্বরে যাওয়ার পর ২ টা ছেলে আমায় আটকায়।
আমার গলায় আইডি কার্ড ছিলো। তো তারা আমায় বলে ইডেনে পড়ে ঢাবিতে কি?
আমি বলি যে আমার আম্মু অসুস্থ বার বার কল করছে কিছু না পাওয়ায় শর্টকাট এ যাচ্ছি। আমায় বলে ক্যাম্পাস তোদের মতো বহিরাগতের জন্য নষ্ট হচ্ছে।আমি বলি আপনার সেশন কত? তারা জানায় ২১-২২। বলি, আমি আপনাদের সিনিয়র। আমায় বলে সিনিয়রের মায়রে বাপ... সহ ....। আমি বার বার বোঝানোর চেষ্টা করি যে. আমি সত্যি বিপদে পড়ে আসছি! কিন্তু তারা সে মানতে নারাজ।
এক পর্যায়ে তারা আমায় বলে চান্স পাসনি আবার ক্যাম্পাসে আসিস লজ্জা লাগে না। আরও অনেক খারাপ ইঙ্গিত এবং বাজে কথা।
পরে আমায় বলে তুই এখন বের হবি ক্যাম্পাস থেকে।
এটাই ওদের শিক্ষা...!!

এ বিষয়ে ভুক্তোভোগীকে নক করলে তিনি বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমার সাথে যে আচারণ করা হয়েছে এটি কোন ছাত্র কোন শিক্ষার্থীর সাথে করতে পারে না । আমার অন্যায় হয়েছে আমার মা ‘পিজি হাসপাতালে ভর্তি থাকায় আমি সট রাস্তা ব্যবহার করে ঢাবির ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে যাওয়া। যার জন্য অকথ্য ভাষা ব্যবহার সহ আমার নেকাব খুলার জন্যও বারবার পেশার দেয় তারা। এদের ব্যবহারে আমি হতবাক।
হেনস্তার বিষয়ে জানতে ওয়েবসাইটে দেওয়া অধ্যক্ষ, ইডেন মহিলা কলেজ প্রফেসর ড. শামছুন নাহারকে নাম্বারে কল করা হলে সেটি বন্ধ দেখায়।
অধ্যক্ষের নাম্বারের জন্য ইডেন মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক জনাব, কেয়া রানী সরকার এবং ফাহমিদা হককে কল করা হলে তারা অসহযোগিতা করেন।
এ বিষয়ে ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদকে কল করা হলে কল রিসিভ হয়নি।
তবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাবি’কে বহিরাগতমুক্ত করতে মোবাইল অভিযান চালানো হবে এ বিষয়ে সাইফুদ্দিন আহমদ জানান, আপনারা জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের মোবাইল অভিযান নিয়মিত প্ররিচালনা হয়ে আসছে। ক্যাম্পাসকে ভ্যাগাবন্ড, নেশাখোর, ছিনতায়কারী এবং ইভটিজার মুক্তের উদ্দেশ্য মূলত এ অভিযান পরিচালিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেখানে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এতটা তৎপর, সেই ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীর সাথে এমন আচারণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।
আপনার মতামত লিখুন :