ঢাকায় হোটেলের খাবার খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম হোসেনের (১৮)। মগবাজারে ‘সুইট স্লিপ’ আবাসিক হোটেলে রাতযাপনের পর খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে তারা তিনজনই মারা যান। পরিবারের দাবি, হোটেলের খাবারে বিষক্রিয়া ছিল। এতে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে নিহতের স্বজনরা।
দীর্ঘ ২৭ বছর সৌদি আরবে কাটানো মনির দেশে ফিরে এসেছিলেন প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসার জন্য। ঈদের পর ঢাকায় এসে আদ্ব-দীন হাসপাতালে সিরিয়াল না পেয়ে রাতে হোটেলে ওঠেন। রাতের খাবার খাওয়ার পর শুরু হয় বমি ও অসুস্থতা। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে রোববার (২৯ জুন) সকালে একে একে স্ত্রী, ছেলে এবং দুপুরে মনির মারা যান।
পুলিশ বলছে, মৃত্যুর কারণ প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিষ মেশানো হয়েছিল কীভাবে, কার মাধ্যমে এবং কেন- তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
মগবাজার মোড়ে অবস্থিত ভর্তা-ভাত খাবারের হোটেলের ম্যানেজার ও বাবুর্চিকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পাশাপাশি মনিরের চাচাতো চাচা রফিক, যিনি কেরানীগঞ্জে তার দুটি বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন, তাকেও থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পরিবারের দাবি, কেরানীগঞ্জে মনিরের দুটি বাড়ি, আবাসন ব্যবসা এবং দূরপাল্লার বাসের ব্যবসা রয়েছে।
চাচাতো ভাই জাকির হোসেন জানান, এসব সম্পত্তি সম্পর্কে পরিবারের কেউ জানতেন না, শুধু মনির, তার স্ত্রী ও কেয়ারটেকার রফিক জানতেন। এমন গোপনীয়তার মধ্যে হঠাৎ তিনজনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সম্পত্তি নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন স্বজনরা।
জাকির বলেন, মনির ভাইয়ের ৫ জুলাই সৌদি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, টিকিটও কাটা ছিল। এখন তাকে মরদেহ হয়ে গ্রামে ফিরতে হচ্ছে।
তদন্তে যেসব প্রশ্ন সামনে এসেছে
১. বিকেলে রফিক যে খাবার এনেছিলেন, তাতে কোনো ধরনের ‘স্লো পয়জনিং’ ছিল কি না?
২. রাত ১০টায় হোটেল থেকে আনা খাবারে সরাসরি বিষ মেশানো হয়েছিল কি না?
৩. মনির সন্ধ্যায় যাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না?
রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেন, পরিবারের কেউ এসে মামলা করলে আমরা আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করব। তবে আমরা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে।
রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম জানান, আবাসিক হোটেল ও খাবার সরবরাহকারী হোটেলের সব তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।
মনিরের মৃত্যুকে ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। কেউ কি অর্থ ও সম্পত্তির লোভে পরিকল্পিতভাবে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেছে, নাকি এটি একটি দুর্ঘটনা- তা স্পষ্ট নয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা সবদিক মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।