রাজধানীর মাঠগুলো বিভিন্ন ক্লাব দখল করে ব্যবসা করছে। এ কারণে শহরের মাঠ ও পার্ক ক্লাবগুলোর দখল থেকে মুক্ত করে নাগরিকদের বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে হবে। এ ছাড়া মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও পানির বিল সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মাঠ বা উদ্যান ভাড়া দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে শহীদ তাজ উদ্দিন স্মৃতি পার্কটি ‘অপারেটর’ নিয়োগের নামে গুলশান ক্লাবকে দেওয়া বেআইনি এবং আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন।
গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ‘মাঠ, পার্ক জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে সাক্ষা করে এসব দাবি জানান। ডিএনসিসির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাতে প্রশাসক পরিবেশবাদীদের সমর্থন জানান এবং মাঠ-পার্ককে ক্লাবের দখলমূক্ত করা ও ডিএনসিসি এলাকায় নতুন আরও মাঠ, পার্ক তৈরি করার অঙ্গীকার করেন।
সাক্ষাতের সময় প্রতিনিধিদলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশবাদী ব্যক্তিত্ব ও পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা মু. হাফিজুর রহমান ময়না, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, পাবলিক হেলথ লইয়ার্স নেটওয়ার্ক আইনজীবীর সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, তেঁতুলতলা মাঠ বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রতনা, সেভ ধানমন্ডি প্লেগ্রাউন্ডসের সংগঠক সৈয়দ ইসতিয়াক আহমেদ, জনস্বাস্থ্য ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম ও মাঠ, পার্ক জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলনের সদস্য ইব্রাহীম খলিল।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলেন, ধানমন্ডি, মোহম্মদপুর, উত্তরা, গুলশান বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় খেলার মাঠগুলো বিভিন্ন ক্লাব দখল করে নিচ্ছে এবং বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিচ্ছে। এসব ক্লাব দুর্নীতি ও অপরাধ করছে। একইসঙ্গে প্রতিনিধিদল বিগত দিনে শহীদ তাজ উদ্দিন স্মৃতি পার্ক ও মাঠ গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে বেআইনি কাজকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। Bangladesh Squash Racquets Federation বনাম ডিসিসি সংক্রান্ত রিট মামলায় সিটি কর্পোরেশনকে এই মাঠের ইজারা বাতিল করা হয় এবং পরর্বতী কোনো মাঠ, পার্ক ইজারা বা এলটমেন্ট না দিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
Gulshan Youth Club বনাম রাজউকের মামলায় গুলশানের পার্কে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মাঠ পার্ক আইনে মাঠ ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনো উপায়ে হস্তান্তর নিষিদ্ধ। কিন্তু বিগত মেয়র আদালত ও আইনের তোয়াক্কা না করে মাঠ গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে বরাদ্দ দেয়। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব জনগণের মাঠ ও পার্কটি ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। যা এখনো চলমান।
প্রতিনিধিদল ডিএনসিসি প্রশাসককে জানান, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব আইন অনুসরণ করছে কি না সেটা দেখার জন্য তৈরি করা কমিটিতে ক্লাবের একাধিক সদস্য ও উপদেষ্টা যুক্ত আছেন। এটা গুরুতরভাবে স্বার্থের সংঘাত। আর এই ইজারা বা অপারেটর নিয়োগ যেহেতু অবৈধ, কাজেই কোনো অবস্থায় অবৈধ বন্দোবস্তের তদারক করার জন্য এমন কোনো কমিটিও আইন সংগত নয়। একইসঙ্গে ডিএনসিসি পার্কটির অপারেটর হিসেবে গুলশাল ইয়ুথ ক্লাবের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে সেটাও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ। অতিদ্রুত এসব চুক্তি বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি মাঠ, পার্কের পানি, বিদ্যুতের খরচ ও নিরাপত্তার জন্য ডিএনসিসিকে আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে।
এ সময় ডিএনসিসি প্রশাসন গুলশান ইয়ুথ ক্লারের চুক্তি আদালত ও আইনে সঙ্গে সাঙ্ঘর্ষিক কি না পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে প্রতিনিধিদের দাবিগুলোর যথার্থতা স্বীকার করে দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন পার্কে লাইব্রেরি স্থাপন, নতুন নতুন পার্ক স্থাপন করার বিষয়েও প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দেন তিনি।
মাঠ, পার্ক জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা অনুযায়ী ডিএনসিসি প্রশাসকের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে গণপুর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাগণ এবং রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে মাঠ, পার্ক ও জলাধার দখলমুক্ত করার বিষয়ে দাবি তুলে ধরতে স্বাক্ষাৎতের অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিয়েছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন